এখানে অন্তত ১০টি দোকান ছিল। গত রাতে বিশাল এলাকা নিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাই অন্য দোকানিরা তাঁদের দোকান ভেঙে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ স্থানে। আজ শুক্রবার দুপুরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চঘাট এলাকায়
এখানে অন্তত ১০টি দোকান ছিল। গত রাতে বিশাল এলাকা নিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাই অন্য দোকানিরা তাঁদের দোকান ভেঙে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ স্থানে। আজ শুক্রবার দুপুরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চঘাট এলাকায়

বাউফলে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘর, দোকানসহ ৫৬ স্থাপনা বিলীন

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় তেঁতুলিয়া নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এক দিনের ভাঙনে ধূলিয়া লঞ্চঘাট এলাকার ১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৫টি ঘর, ৫০টি দোকানসহ বিশাল এলাকা নদীর মধ্যে চলে গেছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ধূলিয়া লঞ্চঘাট এলাকার একটি বিশাল এলাকা নদী গ্রাস করেছে। এর মধ্যে ১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৫টি ঘর, ধূলিয়া বাজার জামে মসজিদ, ৫০টি দোকান ও ধূলিয়া দাখিল মাদ্রাসার এক-তৃতীয়াংশসহ মোট ৫৬টি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে কয়েকজনকে তাঁদের দোকানঘর সরিয়ে নিতে দেখা যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন রোধে বাউফল উপজেলার ধূলিয়া লঞ্চঘাট থেকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা পর্যন্ত এলাকা রক্ষায় একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৭১২ কোটি ২১ লাখ প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য গত ১৮ আগস্ট একনেক অনুমোদন দিয়েছে।

ভাঙনের কবলে পড়ে কত পরিবার যে নিঃস্ব হয়ে গেছে, তার হিসাব নেই। আমরা বাঁচতে চাই। তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে আমাদের বাঁচান।
মো. আবদুল বারেক হাওলাদার, ধূলিয়া লঞ্চঘাট এলাকার আরেক বাসিন্দা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার

ধূলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আনিচুর রহমান বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ধূলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা নদীতে ভাঙছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১৪ হাজার একর ফসলি জমি, সহস্রাধিক বসতঘর, বসতভিটা, বাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

ধূলিয়া লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ধূলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখছি। সব হারানো মানুষের আর্তনাদ দেখলে যেকোনো মানুষের কান্না আসবে।’ তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, শিগগিরই কাজ শুরু না হলে মানচিত্র থেকে ধূলিয়া নামটি অচিরেই মুছে যাবে।

ধূলিয়া লঞ্চঘাট এলাকার আরেক বাসিন্দা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. আবদুল বারেক হাওলাদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাঙনে আমার বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয়েছিল। সেই কবরও বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে কত পরিবার যে নিঃস্ব হয়ে গেছে, তার হিসাব নেই। আমরা বাঁচতে চাই। তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে আমাদের বাঁচান।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন ভাঙনকবলিত পরিববারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘আগুনে পুড়লে ভিটা থাকে। কিন্তু নদীতে ভাঙলে কিছুই থাকে না। তাই যত তাড়াতাড়ি ভাঙন রক্ষা শীর্ষক প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যায়, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।’

পাউবো পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হওয়ার পর যাতে খুব কম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা যায়, সেই প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, খুব কম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।’