পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মুগডাল রপ্তানি হচ্ছে জাপানে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ফলন হয়েছে বাম্পার। এতে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রান্তিক কৃষকদের মুগডাল চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন বলেন, গ্রামীণ ইউগ্লেনা লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ উপজেলার মুগডাল জাপানে রপ্তানি হচ্ছে। বারিমুগ-৬ জাতের ডালের জাপানে বেশ চাহিদা রয়েছে। এ কারণে কৃষকেরা বারিমুগ-৬ জাতের ডাল বেশি চাষ করছেন।
বাউফল কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এ উপজেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২৭ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে মুগডাল চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগই উফশী (উচ্চফলনশীল) জাতের। জেলার সব উপজেলার মধ্যে বাউফল উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মুগডাল চাষ হয়েছে এবং ফলনও ভালো হয়েছে। আমন ধান চাষের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদিত ফসল হিসেবে মুগডাল চাষ করা হয় এ উপজেলায়।
গ্রামীণ ইউগ্লেনা লিমিটেডের উপব্যবস্থাপক মোকসেমুল ফাহিম বলেন, ২০১৪ সাল থেকে তাঁরা পটুয়াখালীতে কাজ করছেন। জেলার মধ্যে বাউফল উপজেলার মুগডাল বেশি জাপানে রপ্তানি হচ্ছে। কৃষকেরা সঠিক মূল্য পাচ্ছেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠান সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ডাল কিনছে। পরে তা প্রক্রিয়াজাত করে জাপানে পাঠাচ্ছে। তবে যে পরিমাণ গুণগত মানসম্পন্ন মুগডাল দরকার, সেটা তাঁরা পাচ্ছেন না। সরকার প্রযুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে গুণগত মানসম্পন্ন মুগডাল বেশি উৎপাদন করা যেত। তা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
>উপজেলায় ২৭ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে মুগডাল চাষ হয়েছে
প্রতি একরে ফলন হয়েছে ৫ থেকে ৬ মণ করে মুগডাল
একরপ্রতি লাভ হচ্ছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা
গ্রামীণ ইউগ্লেনা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রপ্তানি হচ্ছে
উপজেলার সুলতানাবাদ গ্রামের চাষি মো. সেরাজ মাতবর বলেন, অধিক লাভবান হওয়ার আশায় অনেকে রবিশস্য মুগডাল চাষে আগ্রহী হয়েছেন। মুগডাল চাষ করে সফলতাও পেয়েছেন তাঁরা।
দাসপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আমিন মিয়া বলেন, বারিমুগ-৬ জাতের বীজ রোপণ করে তাঁরা এ বছর বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তবে গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে তাঁদের প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
কালাইয়া চরকান্দা গ্রামের কৃষক শংকর হাওলাদার বলেন, তিনি তিন একর জমিতে মুগডাল চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। এ বছর মুগডালের দাম প্রতি মণ ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এক একর জমিতে মুগডাল চাষ করতে মোট খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকার বেশি। প্রতি একরে এ বছর ফলন হয়েছে ৫ থেকে ৬ মণ করে মুগ ডাল। সে হিসাবে একরপ্রতি ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষকেরা যাতে সঠিক পদ্ধতিতে মুগডাল চাষ করতে পারেন, সে জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।