পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে টানা ৪৭ দিন বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার শুরু হয়েছে ফেরি চলাচল। বেলা ১১টায় শিমুলিয়া ঘাট থেকে কে-টাইপের ফেরি কুঞ্জলতা যানবাহন নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছাড়া হয়। ফেরিটি দুপুর ১২টা ২ মিনিটে বাংলাবাজার ঘাটের ২ নম্বর পন্টুনে এসে পৌঁছায়।
তবে বিআইডব্লিউটিসি বলছে, পরীক্ষামূলকভাবে একটি ফেরি ছাড়া হয়েছে। এখনো বাণিজ্যিকভাবে ফেরি চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
দুপুর ১২টায় বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়াত আহম্মেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ১৬টি ছোট গাড়ি (মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান) ও ২০টি মোটরসাইকেল লোড দিয়ে একটি কে-টাইপের ফেরি বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়েছি। ফেরিটি পরীক্ষামূলকভাবে ছাড়া হয়েছে। এখনো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফেরি চলবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ার পরে ফেরি কুঞ্জলতাসহ বেশ কয়েকটি ফেরি চাঁদপুর ফেরিঘাটে পাঠানো হয়। সেখান থেকেই একটি ফেরি গতকাল শিমুলিয়া ঘাটে আসে ট্রায়াল দেওয়ার জন্য।
বিআইডব্লিউটিসি ঘাট সূত্র জানায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ১৮ থেকে ২০টি ফেরি রয়েছে। গত জুলাই ও আগস্ট মাসের ২৪ দিনে পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে চারবার ফেরির ধাক্কা লাগে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন যাত্রী। ফেরির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুর পাইল ক্যাপ। এই পরিস্থিতিতে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে গত মাসের ১৮ আগস্ট দুপুরের পর থেকে এই নৌপথে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার পর আমরা পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচল শুরু করেছি। শিমুলিয়া থেকে কোনো সমস্যা ছাড়াই দুপুর ১২টায় ফেরি কুঞ্জলতা বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছায়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতো ওই ফেরি বাংলাবাজার ঘাট থেকে ১২টি প্রাইভেট কার, ২টি পিকআপ ভ্যান ও ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেল লোড দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার পর শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছাড়া হয়। ফেরিটি ঠিকমতো পৌঁছাতে পারলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমরা ফেরি চলাচল পুরোদমে শুরু করতে পারব।’
সকালে ঢাকাগামী মাইক্রোবাসের চালক রোমান শিকদার বলেন, ‘শুনেছি আজ থেকে ফেরি চলবে। তাই ঘাটে চলে এসেছি। এখন অপেক্ষায় আছি, দেখি কখন ফেরিতে উঠতে পারি।’
ঢাকাগামী সোলাইমান শেখ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ফেরি চালু হওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ কমবে। এটাই এখন আমাদের কাছে আনন্দের। এত দিনে ঢাকায় যেতে আমাদের উল্টো পথ ঘুরে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি, দিনের পর দিন যেন এভাবে আর ফেরি বন্ধ না রাখা হয়।’
বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাবাজার ঘাটে গাড়ির চাপ সেভাবে নেই। তবে ফেরি চালু হওয়ার খবরে ঘাটে কিছু গাড়ি আসছে। ফেরিও প্রস্তুত আছে। ফেরি কুঞ্জলতা বাংলাবাজার থেকে লোড নিয়ে ছাড়া হয়েছে। ক্যামেলিয়া নামের আরও একটি ফেরি ছাড়ার প্রস্তুতি চলছে।