রোববার বেলা সোয়া ১১টায় শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছায় রো রো ফেরি শাহ্ পরান
রোববার বেলা সোয়া ১১টায় শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছায় রো রো ফেরি শাহ্ পরান

বাংলাবাজার ঘাটে গিজগিজ করছে মানুষ

রোববার বেলা সোয়া ১১টা। বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছাল রো রো ফেরি শাহ্ পরান। ফেরিতে দুটি অ্যাম্বুলেন্স আর তিনটি ছোট পিকআপ ভ্যান ছাড়া গিজগিজ করছে মানুষ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকা থেকে এভাবেই বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা।

রোববার সকাল আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুটি ফেরি যাত্রী বোঝাই করে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে আসে। ফেরি দুটিতে কমপক্ষে পাঁচ হাজার যাত্রী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বাংলাবাজার ঘাট থেকেও যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়ার উদ্দেশে দুটি ফেরি ছাড়া হয়।

শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে আসা ফেরিতে গিজগিজ করছিল মানুষ। রোববার বেলা সোয়া ১১টায় শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে

বাংলাবাজার ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফেরি ছাড়া হচ্ছে না। যখনই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরি ছাড়া হয়, তখনই ওই ফেরিতে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। যাত্রীদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ও ট্রাফিক পুলিশের সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে সীমিত আকারে তিন থেকে চারটি ফেরি জরুরি ভিত্তিতে আসা যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। রোববার সকাল আটটায় কুঞ্জলতা ও সাড়ে আটটায় কুমিল্লা নামের দুটি ছোট ফেরি শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আর শিমুলিয়া থেকেও সকাল আটটায় ফরিদপুর নামের একটি ছোট ফেরি সকাল সাড়ে নয়টায় বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছায়। এতে কমপক্ষে দেড় হাজার যাত্রী ছিলেন। এরপর সোয়া ১১টায় বাংলাবাজার ঘাটে আসে রো রো ফেরি শাহ্ পরান। এ ফেরিতেও প্রায় সাড়ে তিন হাজার যাত্রী ছিলেন।

রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট এলাকার চিত্র

সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাটে দেখা যায়, ঘাটে বেশির ভাগ ফেরিই নোঙর করে রাখা। উভয় ঘাট থেকে তিন থেকে চারটি ফেরি চলাচল করছে। চলাচলরত ফেরিগুলোয় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি ছাড়াও ছিল হাজার হাজার যাত্রী। যাত্রীদের মধ্যে করোনা নিয়ে নেই কোনো সচেতনতা। যাত্রীরা একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো। কিছু যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে নেই মাস্ক। ঘাট এলাকায়ও নেই করোনা নিয়ে কোনো ধরনের সচেতনতা। ফেরিতে যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মাহিন্দ্র করে ভেঙে ভেঙে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন। এতে যাত্রীদের দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।

রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট এলাকার দৃশ্য

ঘরমুখী যাত্রীরা জানান, মাহিন্দ্র ও অটোরিকশায় বাংলাবাজার ঘাট থেকে বরিশাল পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৮০০ টাকা। মাহিন্দ্র ও অটোরিকশায় কমপক্ষে আটজন বহন করা হচ্ছে। মোটরসাইকেলে বরিশাল পর্যন্ত ২ জনের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা, খুলনা ২ হাজার ৫০০ টাকা, মাদারীপুরে ৩০০ থেকে ৪০০, ভাঙ্গা ৬০০, ফরিদপুরে ১ হাজার ৫০০ আর গোপালগঞ্জে ১ হাজার ৬০০ টাকা।

নারায়ণগঞ্জ থেকে খুলনাগামী যাত্রী হেনা বেগম বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নিয়া ঘাটে দুই ঘণ্টা বসা ছিলাম। ভিড় ঠেলে ফেরিতে উঠতে গিয়ে আমি পন্টুনে পড়ে যাই। মানুষের চাপ আর পায়ের আঘাতের কষ্ট নিয়েও হাল ছাড়ি নাই। ফেরিতে উঠে পার হইছি। এখন ভাড়া বেশি হলেও ভালোভাবে বাড়ি যাইতে পাড়লে হয়।’

রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট এলাকার পরিস্থিতি

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আসা বরিশালগামী যাত্রী আলী হাওলাদার বলেন, তীব্র রোদ আর গরমে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে উঠতে পারেন। এমন কষ্ট জানলে ঢাকা থেকে আসতেন না।

বাংলাবাজার ফেরিঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ। তবে লাশবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য সকালে দুটি ছোট ফেরি ছাড়া হয়েছে। সেখানে কিছু মোটরসাইকেল ও কিছু যাত্রী ওঠানো হয়। শিমুলিয়া থেকে দুটি ফেরি বাংলাবাজার ঘাটে আসে। এ ফেরিতে প্রচুর যাত্রী ছিলেন। ওপার থেকে এত যাত্রী নিয়ে ঘাটে এলে কী করার থাকে?

রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট এলাকার চিত্র

দুপুর ১২টায় বাংলাবাজার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে ৩০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স দুটি ফেরিতে তোলা হয়। এ ছাড়া রোগীবাহী কয়েকটি গাড়িও ফেরিতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘাটে দিনের বেলায় ফেরি না চলায় বাংলাবাজার ঘাটের টার্মিনালে ৫৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। ফেরি কর্তৃপক্ষ ফেরি না ছাড়লে যানজট কমবে না।