গত কয়েক দিন বাঁধের নানা স্থানের ছিদ্র দিয়ে নদের লোনাপানি ঢুকেছে লোকালয়ে। ভাঙনের আশঙ্কা।
খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিন বাঁধের নানা স্থানের ছিদ্র দিয়ে নদের লোনাপানি ঢুকেছে লোকালয়ে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে কাজ করে পানি ঢোকা আপাতত বন্ধ করেছে। তবে ভাঙনের আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার সময়ও ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে লোনাপানি ঢুকে বড় রকমের ক্ষতি হয়। গত বছরের এপ্রিলে দশালিয়ায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢোকে। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করেন। কিন্তু একই বছরের ২০ মে আম্পানে ওই বাঁধের শেষ রক্ষা হয়নি। বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। শেষবার বাঁধ ভাঙার ১১ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখনো টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার মানুষ বেশ ক্ষুব্ধ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়রার দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। রাস্তাটি এত দুর্বল হয়ে গেছে যে একটি মোটরসাইকেল নিয়েও চলা যায় না। রাস্তার কোথাও কোথাও তিন-চার ফুটের চেয়ে বেশি সরু হয়ে গেছে। গত ২৭ ও ২৮ এপ্রিল দুপুরে জোয়ারের পানিতে বাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে চুঁইয়ে ও ছোট-বড় ছিদ্র দিয়ে লোনাপানি এলাকায় প্রবেশ করে। এলাকার মানুষ মাইকিং করলে স্থানীয় লোকজন পানি বন্ধের জন্য তখনই কাজ শুরু করে। আপাতত পানি ঢোকা বন্ধ হলেও বড় জোয়ারে বাঁধ বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বাঁধের পাশের মাছের ঘেরে নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি ওঠানোয় ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
স্থানীয় কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, চিংড়ি ঘেরে পানি ঢোকাতে বাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসানো হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে নদী থেকে পানি ঘেরে সরবরাহ করা হয়। এতে বাঁধ নড়বড়ে হয়ে গেছে। ওই সব ছিদ্র দিয়েই এখন জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকছে। বাঁধ ভাঙলে কয়েকটি গ্রাম পানিতে ভেসে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, এলাকার মানুষ বাঁধ নিয়ে চিন্তিত। বড় জোয়ার বা ঝড়ে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এতে কয়েকটি গ্রাম পানিতে ভেসে যাবে।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই রাস্তার একটি অংশ ভেঙে আম্পানে পানি ঢুকেছিল। সেই অংশ মেরামত করা হয়েছে। তবে রাস্তাটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ভীষণ নাজুক হয়ে পড়েছে। মানুষ আতঙ্কে আছে। আমরা বারবার সমস্যার কথাটি বলেছি। তবে কেন জানি সেভাবে কাজ হচ্ছে না।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, দীর্ঘদিন খরার কারণে বাঁধের হোগলা এলাকায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এরপর অতিরিক্ত জোয়ারে পানি ফাটল দিয়ে কিছু সময় ভেতরে প্রবেশ করেছে। তাৎক্ষণিক পানি বন্ধের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। পানি ঢোকা বন্ধ হয়ে গেছে। ফাটলগুলো বন্ধের কাজ চলমান আছে।
জরাজীর্ণ ওই তিন কিলোমিটার রাস্তার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই কর্মকর্তা বলেন, ওই ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৮৮০ মিটার রাস্তা ১৪ ফুট চওড়া করার কাজও চলমান রয়েছে। হোগলা পয়েন্ট এলাকায় আরও ৮০০ মিটার কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকি রাস্তার কাজের জন্য প্রস্তাব দেওয়া আছে।