নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে আজ শুক্রবার ভোরে গ্রেপ্তার করা হতে পারে—এমন কথা ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো জেলায়। তবে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেটি গুজবেই সীমাবদ্ধ ছিল। পৌরসভা ভবন চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। আর ভবনের ভেতরে রাত কাটিয়েছেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তাঁর সঙ্গে সেখানে অল্প কয়েকজন কর্মী আছেন।
বসুরহাটের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে তিন শতাধিক পুলিশ ও র্যাবের সদস্য। পরিস্থিতির দেখভাল করার জন্য বসুরহাটে অবস্থান করছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের একজন পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। পুলিশের দাবি, বসুরহাটে এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কোনো ধরনের সমস্যা নেই। অপর দিকে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা শহর থেকে গ্রেপ্তার করা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলকে পৌরসভা ভবনে হামলা-ভাঙচুর ও গুলির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে গভীর রাতে কিংবা শুক্রবার ভোরে বসুরহাট পৌরসভার আলোচিত মেয়র ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জাকে গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ। এ নিয়ে উৎকণ্ঠা ছিল সবার মাঝে। ভোরের আলো ফোটার আগেই সেখানে পৌঁছে যান অনেক গণমাধ্যমের কর্মী। কিন্তু পরিস্থিতি ছিল আগের মতোই। কাদের মির্জা তাঁর পৌরসভা কার্যালয়েই রয়েছেন। পৌরসভা ভবনের চারপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশের বেশ কয়েকটি দল। তারা রাতভর সেখানে নির্ঘুম ছিল।
এদিকে মঙ্গলবার সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত আলাউদ্দিনের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন ওরফে রাজু বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় যান। কিন্তু এজাহার থেকে প্রধান আসামি কাদের মির্জাকে বাদ দেওয়াসহ কিছু ত্রুটির থাকা কথা বলে পুলিশ সেটি গ্রহণ করেনি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন এমদাদ হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিহত আলাউদ্দিনের ভাই একটি এজাহার নিয়ে থানায় এসেছিলেন। কিন্তু এজাহারে সাক্ষীর নামসহ কিছু ত্রুটি ছিল, সে জন্য তিনি আবার এজাহার সংশোধনের জন্য নিয়ে গেছেন। এজাহার থেকে কাদের মির্জার নাম বাদ দিতে আপনারা বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘না, আমরা বাদ দিতে বলব কেন।’
পুলিশ সুপার প্রথম আলোকে জানান, বসুরহাটের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে তিন শতাধিক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। রয়েছে র্যাবের দুটি দল। বর্তমান পরিস্থিতি একেবারে শান্ত। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।
বৃহস্পতিবার জেলা শহর থেকে গ্রেপ্তার করা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলকে মঙ্গলবার রাতে পৌরসভা ভবনে হামলা-ভাঙচুর ও গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই মামলা ছাড়াও তদন্তাধীন আরও একাধিক মামলা রয়েছে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।
১৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশিরহাট বাজারে আবদুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদল সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি মারা যান। ৯ মার্চ রাত ৯টার দিকে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যুবলীগ কর্মী আলাউদ্দিন (৩২)।