বরিশাল মহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলে খাবার নিয়ে মারামারি

বরিশাল মহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলে দুই দল নেতাকর্মীর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জিলা স্কুল মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে খাবার বণ্টন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার–ছোড়াছুড়ি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার মহানগর বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ড ছাড়াও সদর উপজেলা এবং দক্ষিণ ও উত্তর জেলা বিএনপির প্রায় ৩ হাজার নেতা–কর্মী দাওয়াত পান। ইফতারে পোলাও, মুরগির রোস্ট, ডিম, পেঁয়াজু, ছোলা, জুস, পানি, খেজুরসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হয়।

ইফতার মাহফিলে উপস্থিত কয়েকজন নেতা বলেন, ইফতার শুরু হওয়ার আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তৃতা দেন। তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপরই প্যান্ডেলের পেছনে দুই দল কর্মীর মধ্যে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। খাবার বণ্টনকে কেন্দ্র করে এ সময় তাঁদের মধ্যে চেয়ার–ছোড়াছুড়ি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে আহত ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।

এ মারামারির ঘটনায় কয়েকজন আহন হয়েছেন

বরিশাল মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদের তত্ত্বাবধানে ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, ঢাকা (দক্ষিণ) বিভাগীয় টিম প্রধান জাকির হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেজবা উদ্দিন, রাজিব আহসান, বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার প্রমুখ।

জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান রাতে প্রথম আালোকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানের প্যান্ডেলের বাইরে একটু হাতাহাতি হয়েছে। তবে আমরা মঞ্চে বা সামনের দিকে থাকা কেউ তা টের পাইনি। শুনেছি, মোবাইল নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে এটা হয়েছে। এতে একজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলে শুনেছি। তবে এটা গুরুতর কোনো ঘটনা নয়।’ আহত ব্যক্তির নাম–পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‌‘তা আমার জানা নেই।’

বরিশাল মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। কমিটিতে মনিরুজ্জামান খানকে আহ্বায়ক, আলী হায়দার ওরফে বাবুলকে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়। এরপর গত ২২ জানুয়ারি ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে আগের কমিটির ১৭১ সদস্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কেউ স্থান পাননি।

পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির জন্য কেন্দ্রে নাম জমা দেওয়ার পর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তা নিয়ে আপত্তি তোলেন বিলুপ্ত কমিটির অন্তত ৩১ নেতা। তাঁরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তাঁদের আবেদন আমলে নেওয়া হয়নি। এদিকে মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে চলা দ্বন্দ্ব ও বিতর্কের মধ্যে গত ১১ মার্চ সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

এ নিয়ে বাদ পড়া নেতারা আলাদা ইফতারসহ তিন মাস ধরে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তবে বৃহস্পতিবার ইফতারে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার ও বাদ পড়া নেতাদের নিমন্ত্রণ করা হয়নি।

২০ বছরের বেশি সময় ধরে মহানগর কমিটিতে সভাপতির পদে ছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার। সাংসদ, হুইপ ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মজিবর রহমান সরোয়ারের প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় অংশটি আহ্বায়ক কমিটি করতে এককাট্টা হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সফল হন।