বরিশাল বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের একজনের মৃত্যু হয়েছে আজ বুধবার সকালে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং অপরজন মারা গেছেন গতকাল মঙ্গলবার রাতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। এ নিয়ে বিভাগে সরকারি হিসাবে ১৬ জনের মৃত্যু হলো। আর বেসরকারি হিসাবে এই মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আজ সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ছয় জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭১ রোগী। আর মারা গেছেন দুজন। এর মধ্যে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ছিপাশা গ্রামের গৃহবধূ হাসিনা বেগম (৩০) মারা যান আজ সকাল আটটায়। তিনি আজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। অপরজন মারা যান বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গতকাল। বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া এলাকার আহমেদ খাঁ (৯০) নামের ওই রোগী গতকাল বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর মারা যান।
বেসরকারি হিসাবে মারা যাওয়া ৩৪ রোগীদের মধ্যে বরগুনার বেতাগীতে আছেন ৬ জন, বরগুনা সদরে মারা গেছেন ২ জন, আমতলীতে ১ জন, পটুয়াখালী জেলায় ১৯ জন, বরিশালে ৫ জন ও ভোলায় একজন রোগী মারা যান। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মারা যাওয়া পটুয়াখালীর ১৯ জনের মধ্যে ৬ জন হাসপাতালে ও ১৩ জন মির্জাগঞ্জ উপজেলায় বাড়িতে মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগে আজ পর্যন্ত হিসাবে ডায়রিয়ায় ভোলা জেলায় সর্বাধিক আক্রান্ত হয়েছেন। এ জেলায় মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৪০৫। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পটুয়াখালী। এ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ২২৫ জন। এ ছাড়া বরগুনায় আক্রান্ত ৭ হাজার ৬২৫ জন, বরিশালে ৬ হাজার ৫১৩, পিরোজপুরে ৬ হাজার ৫৭ ও ঝালকাঠিতে ৫ হাজার ৪৩২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৪৮ হাজার ২৫৭।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বরিশাল বিভাগে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে এপ্রিলে এটা অনেকটাই খারাপ আকার ধারণ করে। চার মাসে বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে এপ্রিলেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ দশমিক ২৫ শতাংশ রোগী। গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৫০১। এ ছাড়া তিনজন বাদে বাকি সব মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এপ্রিলেই। চলতি মাসে মৃত্যু হয় তিনজনের।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত যেসব রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁর কয়েক গুণ বেশি রোগী আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিয়েছেন।
ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অনুসন্ধানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বরিশাল ও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে এবং এর আগে মার্চে বরগুনা জেলায় সমীক্ষা চালায়। বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় সমীক্ষা চালানো দলটির ফলাফল পেতে আরও সময় লাগবে। তবে বরগুনায় প্রতিনিধিদলটি ১ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তালিকা ধরে চালানো সমীক্ষায় দেখা যায়, ৯৪ শতাংশ গভীর নলকূপের পানি পান করলেও দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজে খালের পানি ব্যবহার করেন ৭১ শতাংশ মানুষ। সমীক্ষাভুক্ত এলাকায় মাত্র ২০ শতাংশ বাড়িতে গভীর নলকূপ আছে। প্রতিষ্ঠানটি বরগুনার খালের পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবে পরীক্ষা করে তাতে মলের জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছে। ২০ রোগীর মল পরীক্ষায় তিনজনের মলে কলেরা ও ইকোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এর মধ্যে খাওয়ার ও গৃহস্থালির কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো, খাল-নদীর পানি ফুটিয়ে অথবা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করে ব্যবহার করা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব একটু কমছে। আগে যেখানে প্রতিদিন এক হাজারের ওপরে আক্রান্ত হতেন, এখন সেটা হাজারের নিচে নেমেছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যেমন আক্রান্ত রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইনের মজুত রয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসক, নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’