বরিশাল থেকে ঝালকাঠি হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতটি সড়ক পথে বাস চলাচল মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। আকস্মিক এই ধর্মঘট আহ্বান করেছে ঝালকাঠি বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন।
ধর্মঘট আহ্বানকারীদের অভিযোগ, সোমবার রাতে মাহিন্দ্র ও আলফাশ্রমিকেরা বরিশাল রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঢুকে সাত-আটটি বাসের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেন এবং ভাঙচুর করেন। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক বাধা দিলে তাঁদের মারধর করা হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট আহ্বান করেন ঝালকাঠি বাস মালিক ও শ্রমিকেরা। ফলে বরিশাল রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের বরিশাল-খুলনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মঠবাড়িয়া, বামনা ও পাথরঘাটা—এই সাতটি পথের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব পথের হাজারো যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ঝালকাঠি জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর চৌধুরী বলেন, সোমবার রাতে বরিশাল রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে মাহিন্দ্র ও আলফা শ্রমিকদের হামলায় ঝালকাঠির কয়েকজন বাসশ্রমিক আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের বাস ও মিনিবাসের শ্রমিকেরা একযোগে এ ধর্মঘট ডেকেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী তীব্র গরম ও রোদের মধ্যে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকে বিকল্প বাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে ছুটছেন।
স্ত্রী, ছোট দুই সন্তান নিয়ে বরিশালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন পাথরঘাটার আলী আকবর নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে শুনি, বাস চলাচল বন্ধ। এত দূরের পথ, আবার সঙ্গে স্ত্রী ও ছোট দুই শিশু। মোটরসাইকেলে ভেঙে ভেঙে যে গন্তব্যে যাব, সে অবস্থাও নেই। কখন যে ধর্মঘট উঠে যাবে, ঠিক নেই। কী যে করব, ভেবে পাচ্ছি না।’
বরিশাল-পটুয়াখালী বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় এক মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী যুবক নিবন্ধনবিহীন কয়েকটি মাহিন্দ্র ও আলফা সংগ্রহ করে মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করাচ্ছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সোমবার রাতে ওই যুবকের নেতৃত্বে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে ঝালকাঠি বাসমালিকদের কয়েকটি বাসে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা কয়েকজন শ্রমিককে মারধর করে। এর প্রতিবাদে ঝালকাঠি মালিক-শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকেছেন। ফলে আমাদের বাসগুলোও ওই সব পথে চলাচল করতে পারছে না। পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে বাস চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টাও অব্যাহত আছে।’