পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। গত এপ্রিল মাসে ওই ইউনিটের প্রধান এম এ আজাদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ইউনিটটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের নিচতলায় আটটি শয্যা নিয়ে এই ইউনিট চালু করা হয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ মুহূর্তে দক্ষিণাঞ্চলের কোনো হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নেই। এম এ আজাদকে প্রধান করে ওই বিভাগে ৮ চিকিৎসক ও ১৬ নার্সের (নারী ও পুরুষ) পদ রাখা হয়। এপ্রিলে ওয়ার্ডটি বন্ধ করে দেওয়ায় দায়িত্বরত নার্স ও কর্মচারীরা রুটিনমাফিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বার্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করতেন—এমন একজন নার্স জানান, ওয়ার্ডটি চালু না থাকায় অগ্নিদগ্ধ রোগীরা মারাত্মক দুর্ভোগে আছেন। তাঁদের ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যেতে হচ্ছে। হতদরিদ্র রোগীরা অর্থের অভাবে ঢাকায় যেতে না পারায় তাঁদের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। অনেক রোগীর স্বজনেরা এসে খোঁজ নেন ওয়ার্ডটি চালু হয়েছে কি না।
পরিস্থিতি স্বীকার করে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিদগ্ধ যেসব রোগী আসছেন, তাঁদের হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগী অবস্থা বেশি গুরুতর দেখলে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
একইভাবে এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের মানসিক ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডের একমাত্র চিকিৎসক তপন কুমার সাহা অবসরে যাওয়ার পর চিকিৎসকসংকটে ওয়ার্ডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কার্যক্রম না থাকায় ওই ওয়ার্ডের যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দী করে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগেও তীব্র চিকিৎসকসংকট রয়েছে বলে জানা গেছে। বরিশাল বিভাগের একমাত্র নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) রয়েছে এই হাসপাতালে। গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিট মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ধার করে চিকিৎসক এনে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় মুঠোফোনের মাধ্যমেও চিকিৎসাসেবা দিতে বাধ্য হন কর্তব্যরত নার্সরা। এভাবে হাসপাতালের ৩৭টি ওয়ার্ডে চিকিৎসকসংকট থাকায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, ৩৬০ শয্যার মঞ্জুরীকৃত পদের অনুকূলে এই হাসপাতালে চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদ ২২৪। সেখানে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন মাত্র মাত্র ৯৬ জন। অথচ এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। হাসপাতালটি প্রথমে ৩৬০, পরে ৫০০ শয্যায় উন্নীত হয়। এরপর ১০ বছর আগে তা এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল বাড়েনি। চিকিৎসক ছাড়াও নার্স, টেকনোলজিস্ট ও কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে।
মেডিসিন বিভাগের এক রোগীর স্বজন আমির হোসেন ক্ষোভ নিয়ে বলেন, বড় চিকিৎসকেরা প্রতিদিন একবার কোনো রকম রাউন্ডে এসে ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু এরপর আর তাঁদের পাওয়া যায় না। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরাই রোগীদের একমাত্র ভরসা।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি পাথরঘাটার এক রোগীর স্বজন অপু খান বলেন, ‘হাসপাতালের পরিবেশ খুবই নোংরা ও দুর্গন্ধময়। এরপর চিকিৎসকসংকটে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই। বিভাগে এটাই একমাত্র বড় সরকারি হাসপাতাল। তাই আসতে হয়। এখন এখানেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?’
হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুই হাজার শয্যায় উন্নীত করতে নতুনভাবে জনবলকাঠামো তৈরির জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন জনবলকাঠামো তৈরি করে পাঠিয়েছি। দুই হাজার শয্যার জন্য অন্তত ১ হাজার ২০০ চিকিৎসক দরকার। কিন্তু পুরোনো পদের অনুকূলেই প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারী পাইনি।’