বরিশাল বিভাগে করোনাভাইরাস শনাক্তদের মধ্যে ৬৭ দশমিক ২১ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিভাগের পাঁচ ৫ জেলায় (ভোলা বাদে) আক্রান্ত হয়েছে ৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৬১ জনের তথ্য পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
পর্যালোচনায় আক্রান্ত এই ৬১ জনের মধ্যে ১৯ দশমমিক ১৯ ভাগ অর্থ্যাৎ ১১ জন নারী। আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ৭ জনের বয়স ১৭ থেকে ৩৯ বছরের মধ্যে। বাকি চারজনের বয়স ৪১ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বরিশালে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়। তিনি নারায়ণগঞ্জফেরত একজন শ্রমিক। নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। আর বরিশাল জেলায় প্রথম করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। গতকাল পর্যন্ত ১৩ দিনে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে কেবল ভোলায় কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। বাকি পাঁচ জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ৭৬ জন। এর মধ্যে বরিশালে ৩৩ জন, বরগুনায় ২০ জন, পটুয়াখালীতে ১২ জন, পিরোজপুরে ৫ জন ও ঝালকাঠিতে ৬ জন। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে এই বিভাগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন চারজন। এর মধ্যে বরগুনায় দুজন এবং পটুয়াখালী ও বরিশালে একজন করে মারা গেছেন।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬১ জন রোগীর বয়স বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৬ মাস, ১০ বছর ও ৯ বছরের শিশু আছে ৩ জন, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ ২৭ জন, ৩১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী যুবক ১৪ জন, ৪৬ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ব্যক্তি ১০ জন এবং ৫৬ থেকে ৭০ বছর বয়সী ব্যক্তি ৭ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র বলছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বয়স্কদের মধ্যে বেশি হলেও বাংলাদেশে যুবক ও তরুণরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসে ষাটোর্ধ্বদের আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে কম। তবে বয়সজনিত বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকার কারণে এই বয়সীদের মৃত্যুর হার বেশি। কখনো কখনো দেখা যায় যে ২১–৩০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, আবার কখনো কখনো ৩১–৪০ বছর বয়সী বা ৪১–৫০ বছর বয়সীরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে বয়স্ক ব্যক্তিরা সবসময় ১০ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে থাকেন। কারণ, বাংলাদেশে তরুণদের তুলনায় বয়স্ক মানুষ কম।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা শুরুতেই বলেছি যে করোনাভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যে এটার সংক্রমণ থেকে কোনো বয়সের মানুষই নিরাপদ নয়।
অর্থ্যাৎ সবারই ঝুঁকি আছে। এ ক্ষেত্রে বয়স কোনো বিষয় নয়। তবে যাদের বয়স কম, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় তাঁরা এ ভাইরাসকে মোকাবিলা করে কোনোরকম চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। আবার কম বয়সী যারা শনাক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউই কিন্তু সংকটাপন্ন অবস্থায় নেই। তবে বয়স্কদের মধ্যে বিশষে করে যাদের উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, হাঁপানি, ক্যানসারে আক্রান্ত বা ক্যানসারের ওষুধ সেবন করেন এমন ব্যক্তি এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এ জন্য সবার উচিত পরিবারের প্রবীণদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিজেরা সতর্ক থাকা।'