বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলা, ছাত্রলীগ–পুলিশ সংঘর্ষ

বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনওর বাসভবনের সামনে হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ১৮ আগস্ট রাতে, বরিশাল নগরে
ছবি: সাইয়ান

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দিবাগত রাতে দুই দফায় জেলা ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী তাঁর বাসভবনে হামলা চালায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ, আনসার সদস্যসহ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর মিলেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করে। এসময় ইউএনওর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাঁদের পরিচয় জানতে চান। এর পর তাঁরা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এসময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়।

পরে খবর পেয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান আহেমদ ওরফে বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহসভাপতি আতিকুল্লাহ খান মুনিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব খান, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ শতাধিক নেতাকর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় নেতাকর্মীরা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ১৮ আগস্ট রাতে, বরিশাল নগরে

ইউএনও মুনিবু্র রহমান অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসে। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তাঁরা আমাকে গালিগালাজ করে। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।

ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইউএনওর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর তাঁরা পুলিশের ওপরও চড়াও হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। লাঠিচার্জ করা হয়।

আড়াআড়ি যানবাহন রেখে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। ১৮ আগস্ট রাতে, বরিশালে।

সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আবু বকর ও শরিফুল নামের দুই পুলিশ সদস্য। আরও আহত হয়েছেন ইউএনওর সরকারি বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্য ফারুক হোসেন ও নাসির উদ্দিন নামে আরেকজন। তাঁদের সবাইকে পুলিশ হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলা ও সংঘর্ষের পর ঢাকা–বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত অভিযোগ করে বলেন, ইউএনওর নির্দেশে আনসার সদস্যরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে। এতে অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

বরিশালের কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের পর ইউএনওর নিরাপত্তায় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বরিশাল নগরের থানা কাউন্সিল এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি। গতকাল রাতে

বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এরামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ইউএনওর অফিস ও বাসভবন সংরক্ষিত এলাকা। এ এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা আইনত অপরাধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যা করণীয় সেটাই করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।