বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৭ জন কাউন্সিলর হঠাৎ মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ তিনজনকে যে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন, তা নগরে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। তাঁদের মতে, এটা দলীয় বিষয় নয়। আর ওই সাতজন কাউন্সিলরের দলে কোনো পদ-পদবিও নেই।
তবে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই সাত কাউন্সিলরই আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে গত বছরের আগস্টে মেয়রের সঙ্গে প্রশাসনের দ্বন্দ্বের সময় এই সাতজন কাউন্সিলর বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের পক্ষে অবস্থান নেন। প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে আসছেন তাঁরা। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
গত ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের ভেতরে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে টাঙানো বিভিন্ন শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণ করতে যান সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় মেয়রকে প্রধান আসামি করে তৎকালীন ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। ঘটনার তিন দিন পর বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে বিষয়টি সমঝোতা হলে উভয় পক্ষে উত্তাপ কমে।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই ঘটনার পর পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাতজন কাউন্সিলর তাঁর পক্ষে অবস্থান নেন। এই সাতজন কাউন্সিলর হলেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ুন কবির, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৌহিদুল ইসলাম, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ আহমেদ, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়াউর রহমান, ১ নম্বর ওয়ার্ডের আমির হোসেন বিশ্বাস, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শরীফ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের এনামুল হক।
সাত কাউন্সিলরের আইনি নোটিশ দেওয়ার ঘটনাটি ১৯ আগস্টের ঘটনার রেশ বলে ধারণা করছেন অনেকে। তবে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
যোগাযোগ করা হলে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা দলের না, সিটি করপোরেশনের বিষয়। তাই এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে ওই ৭ কাউন্সিলর মহানগর কিংবা ওয়ার্ডের কোনো কমিটিতে নেই।’
সাত কাউন্সিলরের পক্ষে আইনজীবী আজাদ রহমান নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে বলা হয়েছে, নোটিশদাতা সাত কাউন্সিলরের সিটি করপোরেশন থেকে মাসিক সম্মানী ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা পাচ্ছেন। কিন্তু অন্য কাউন্সিলরদের ৫০ হাজার টাকা করেই মাসিক সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স ১ হাজার শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে নোটিশদাতাদের জনগণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নোটিশে আরও বলা হয়, সরকারি আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী সিটি করপোরেশন পরিচালনার নিয়ম থাকলেও তা মেয়রসহ নোটিশ পাওয়া তিনজন খামখেয়ালিভাবে কাজ চালাচ্ছেন।
২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নির্বাচিত হয়ে মেয়র হন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সিটি করপোরেশনে আছেন ৪০ জন কাউন্সিলর।