দুটি চ্যানেল দিয়ে নৌ চলাচল নিশ্চিতকরণের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক সমীক্ষা করা হচ্ছে। আলুবাজার ও কালীগঞ্জ—দুটি চ্যানেলের একটি দিয়ে যাত্রীবাহী ও অপরটি দিয়ে পণ্যবাহী নৌযান চলবে।
বরিশাল-ঢাকা পথে সারা বছর নৌ চলাচলের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এ জন্য মেঘনার ঝুঁকিপূর্ণ মিয়ারচর নৌ চ্যানেলের বাইরে আরও দুটি বিকল্প নৌপথ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেঘনা নদীর শাখা মিয়ারচর এলাকায় অতিরিক্ত স্রোত ও পলি জমে যাওয়ার কারণে ঢাকা-বরিশাল নৌপথটি বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব লঞ্চ চলতে হচ্ছে ভোলার ইলিশা হয়ে। সমাধান হিসেবে চাঁদপুরের আলুবাজার থেকে হিজলা এবং একই এলাকার কালীগঞ্জ হয়ে বিকল্প দুটি নৌপথ চালুর প্রক্রিয়া চলছে।
শনিবার বরিশালের হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ পরিদর্শনের সময় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিকল্প দুটি নৌপথ করার কথা জানিয়েছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌপথের মিয়ারচর, কালীগঞ্জ ও আলুবাজার—এই তিনটি চ্যানেল সক্রিয় রাখতে হবে। মিয়ারচরে যে পথটা আছে, তা ড্রেজিং করে চালুর ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি আলুবাজার ও কালীগঞ্জ চ্যানেলও বিকল্প হিসেবে চালু থাকবে। কোনো কারণে যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, তাহলে বিকল্প পথ ব্যবহার করা যাবে।
বিকল্প নৌপথ চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে দুটি চ্যানেল দিয়ে নিরাপদ নৌ চলাচল নিশ্চিতকরণের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক সমীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আলুবাজার ও কালীগঞ্জ—দুটি চ্যানেলের একটি দিয়ে যাত্রীবাহী এবং অপরটি দিয়ে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করবে।
বিআইডব্লিউটিএ বলছে, দেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-বরিশাল নৌপথকে নির্ঝঞ্ঝাট করার জন্য প্রস্তাবিত নতুন দুটি নৌপথের মধ্যে একটি হলো বরিশাল-হিজলা-মৌলভীরহাট-শৌলা বদরটুনী-৬ নম্বর-হরিণা আলুবাজার (চাঁদপুর) হয়ে ঢাকা পর্যন্ত। এর দূরত্ব ৭৯ নটিক্যাল মাইল বা ১৪৬ কিলোমিটার। এই পথে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর গন্তব্যে যেতে সময় লাগবে ৯ ঘণ্টা। অপর পথটি হলো বরিশাল-উলানিয়া-কালীগঞ্জ-চাঁদপুর-ঢাকা। এর দূরত্ব ৯৮ নটিক্যাল মাইল বা ১৮১ কিলোমিটার। এই পথে যাত্রীবাহী জাহাজের গন্তব্যে যেতে সময় লাগবে প্রায় ১০ ঘণ্টা।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র আরও জানায়, মিয়ারচর চ্যানেলটি ব্যবহার করে তুলনামূলক কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই চ্যানেল প্রতিবছর বিপুল অর্থ ব্যয় করে খনন করা হলেও নাব্যতা রক্ষা করা যায় না।
অস্বাভাবিক পলি জমে বছর না ঘুরতেই চ্যানেলটির নাব্যতা কমে যাওয়ায় ঢাকা এবং বরিশালমুখী যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানগুলোকে জোয়ারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আবার ভরা মৌসুমে চ্যানেলটি উত্তাল থাকায় প্রায়ই মালবাহী নৌযানডুবির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া চ্যানেলটিতে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। গত কয়েক বছরে এই চ্যানেলে কয়েকটি বালু ও পণ্যবাহী নৌযান ডুবে যাওয়ার পর তা উদ্ধার না করায় চ্যানেলটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই পথ বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ। এ কারণেই লঞ্চগুলোকে বর্তমানে ভোলার ইলিশা হয়ে ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল অঞ্চলের ট্রাফিক ও নৌনিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক এবং বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নৌপথে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজের সংঘর্ষ হয়েছে বেশি। তাই যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য আলাদা নৌপথ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা ও ভোগান্তিও কমবে।