গোয়ালন্দে গৃহনির্মাণ প্রকল্প

বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার শঙ্কায় তড়িঘড়ি, কৃষকের কান্না

ডিসেম্বরের মধ্যে গৃহনির্মাণের ভিটা তৈরি না হলে বরাদ্দ ফেরত যেতে পারে। কিন্তু এসব জমির ফসল এখনো ঘরে তোলা বাকি।

রাজবাড়ী জেলা
রাজবাড়ী জেলা

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দুর্গম চর করনেশান মৌজার ফসলি জমিতে গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। জমিগুলো সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। তবে কৃষকদের দাবি, জমির মালিকানা নিয়ে মামলা চলমান। এ ছাড়া তাঁদের চাষ করা ফসলও ঘরে তোলা হয়নি। এর মধ্যেই মাটি কেটে ভিটা তৈরি করা হচ্ছে।

চর করনেশান উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদী শিকস্তি–পয়স্তির কারণে খাস হওয়ায় পাঁচ–ছয় দিন ধরে ওই জমি থেকে মাটি কাটার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এসব জমিতে স্থানীয় কৃষকেরা বেগুন, পেঁয়াজ, টমেটোর আবাদ করেছেন। আগে থেকে নোটিশ না দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু হয় বলে অভিযোগ কৃষকদের। মৌসুমি ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত গৃহনির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার দাবি তাঁদের।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হাসান মোল্লা পাড়ার শমসের ব্যাপারী (৯০) বলেন, তাঁর বাপ-চাচাদের সম্পত্তি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর পুনরায় জেগে ওঠে। এরপর থেকে সেখানেই তাঁরা চাষাবাদ করছেন। এখন জমি সরকার নিয়ে নিলে পরিবারের সদস্যদের পথে বসতে হবে।

শিকস্তি-পয়স্তির কারণে চর করনেশান মৌজার জমি খাস হয়ে গেলে রাজবাড়ী জজ আদালতে মামলা করেন স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব আলী। ১৯৭০ সাল থেকে সেই মামলা চলমান। এ বছর মৌজার দুই বিঘা জমিতে টমেটো, দুই বিঘায় বেগুন ও এক বিঘায় অন্যান্য ফসলের চাষ করেছেন তিনি।

আইয়ুব আলী বলেন, চাষাবাদে এরই মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। তার মধ্যে তিন লাখ টাকা ঋণ নেওয়া। কিছুদিনের মধ্যে ফসল তোলার উপযোগী হবে। কিন্তু গৃহনির্মাণের জন্য মাটি কাটার কাজ চলতে থাকলে তাঁর ফসল ঘরে তোলার আগেই নষ্ট হয়ে যাবে।

স্থানীয় শাহজাহান ব্যাপারী (৫০), চান মিয়া (৪৫), সূর্য শেখ (৫০), হাফজা বেগম (৪০), করিমুন নেছাসহ (৪৫) কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, মৌজার প্রায় ৪২ বিঘা জমির ফসল নষ্ট করে মাটি কাটার কাজ চলছে। প্রশাসন ফসল ঘরে তোলার সময় দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কাজ শুরু হয়েছে। গোয়ালন্দে ৪৩০টি পরিবারকে গৃহনির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে নদীভাঙনের শিকার অসহায় ১৫০টি পরিবারকে এ অঞ্চলে পুনর্বাসনের জন্য সম্পূর্ণ সরকারি খাস জমিতে ভিটা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। জমির মালিকানা দাবি করলেও স্থানীয় লোকজন মালিকানার পক্ষে বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছাড়া সরকারি জমিতে কাজ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। ডিসেম্বরের মধ্যে ভিটা তৈরির কাজ শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্য কাজ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই।