কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ জন্য গত দুই দিনে উপজেলার ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে বানানো পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০টি পরিবার অবস্থান করছে। আজ রোববার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং কৃষি, ত্রাণ ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
সভায় জানানো হয়, বন্যায় জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। অধিকাংশ পরিবার আত্মীয়স্বজনদের উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। পাঁচটি বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে চিলাউড়া উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ১০টি পরিবার, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার আবদুর রশিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫টি পরিবার, কেশবপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ২০ পরিবার, সফাত উল্যাহ উচ্চবিদ্যালয়ে ২০ পরিবার ও উপজেলা সদরের বিআরডিবি ভবনের বারান্দায় ৫টি পরিবার এসে আশ্রয় নিয়েছে।
আজ দুপুরে চিলাউড়া উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, পরিবারগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনটিতে বসবাস করছে। চিলাউড়া গ্রামের বাসিন্দা ফয়সল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে তিনি রোববার ভোর থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। বিকেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আর্থিক সহায়তা হিসেবে তাঁকে ৫০০ টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া সরকারি কোনো সহায়তা তিনি পাননি।
চিলাউড়ার পণ্ডিতা গ্রামের কনটাই বেগম নামের এক নারী বলেন, তিনি দুই দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার সামান্য শুকনা খাবার পেয়েছেন। আর কিছু পাননি।
সভায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, বন্যার পানি উঠে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক নিমজ্জিত হয়েছে। পানি কমলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস বলেন, বন্যার পানিতে বিদ্যালয় এলাকা নিমজ্জিত হওয়ায় বর্তমানে ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা করেছেন তিনি।
জগন্নাথপুর ইউএনও সাজেদুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সভা করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারিভাবে ৪৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।