কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ বগুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের অ্যাডওয়ার্ড পার্ক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বগুড়া শহরের হাজার হাজার ডায়াবেটিসের রোগী এবং হৃদ্রোগী ছাড়াও অনেকে এখানে এসে নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বগুড়া শহরের অ্যাডওয়ার্ড পৌর পার্ক প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগী ও হৃদ্রোগীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। পার্কে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় শিশু-কিশোরেরাও খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ পাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বগুড়া শহরের একমাত্র উদ্যানটি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ বগুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের প্রধান এই উদ্যান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বগুড়া শহরের হাজার হাজার ডায়াবেটিসের রোগী ও হৃদ্রোগী ছাড়াও অনেকে এখানে এসে নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৯টা এবং সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন নারী ও পুরুষেরা দল বেঁধে পৌর পার্কে হাঁটাহাঁটি করেন। নিয়মিত শরীরচর্চার জন্য পার্কে রয়েছে ‘সুবেহ সাদিক’, ‘সুস্থ জীবন’সহ একাধিক সংগঠন। পৌর পার্ক বন্ধ থাকায় সাত মাস ধরে প্রাতর্ভ্রমণ ও হাঁটাহাঁটি বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। পার্কের ভেতরে পুকুরে সাঁতার প্রশিক্ষণ নিতেন জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক পাওয়া অনেক সাঁতারু। পার্ক বন্ধ থাকায় তাঁদের প্রশিক্ষণও বন্ধ।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের ক্লাব মাটিডালি ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক ফারুকুল হাসান বলেন, প্রতিদিন ভোরে পৌর পার্কে দল বেঁধে হাঁটাহাঁটি করা এক যুগ ধরে অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পার্ক বন্ধ ঘোষণা করলে দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ছন্দপতন ঘটে। এখন জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্কটি খুলে দেওয়া দরকার।
পৌর পার্কের ভেতরে শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তন ও উডবার্ন মিলনায়তন। এই দুটি মিলনায়তনে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়। মিলনায়তনে নিয়মিত নানা অনুষ্ঠান আয়োজন ছাড়াও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কার্যালয়ে অনুশীলন ও মহড়া চলত। পার্ক বন্ধ থাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মহড়া ও অনুশীলনও বন্ধ।
বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি ইসলাম রফিক প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর রমনা পার্ক খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরও জাদুঘর খুলে দিয়েছে। পর্যটন মোটেল খুলেছে। শুধু বন্ধ রয়েছে সাত লাখ মানুষের এই শহরের একমাত্র বিনোদন উদ্যান বগুড়ার অ্যাডওয়ার্ড পার্ক।
বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান বলেন, ‘অ্যাডওয়ার্ড পার্ক শুধু বিনোদন উদ্যান নয়, এখানের দুটি মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক কর্মীদের পদচারণে সারা বছর মুখরিত থাকত পার্ক চত্বর। কিন্তু পার্ক ও মিলনায়তন প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ থাকায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্ক ও মিলনায়তন খুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি।’
এ বিষয়ে বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পৌর পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। পার্ক খুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়নি। জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে শিগগিরই পার্ক খুলে দেওয়া হবে।