দেশ ও দেশের বাইরের ১১৪টি বন্ধুসভা গত ৮ এপ্রিল থেকে ২ মে দেশব্যাপী ঈদের উপহারসামগ্রী বিতরণ করে।
বগুড়ার দৃষ্টিহীন আফজাল হোসেন পথে পথে ভিক্ষা করেন। ভিক্ষার উপার্জনে চলে চার সদস্যের সংসার। সাধারণ দিনেই যাঁর ঘরে চুলা জ্বালাতে কষ্ট হয়, ঈদের পোলাও-সেমাই তো তাঁর জন্য দূরের বাতিঘর। কিন্তু এ বছর ঈদের আগেই বগুড়া বন্ধুসভার বন্ধুরা তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন পোলাওয়ের চাল, সেমাই, চিনি, দুধ ও মসুর ডাল।
উপহার পেয়ে শহরের সাবগ্রামের হতদরিদ্র আফজাল হোসেন বলেন, ‘ম্যালা দিন হচ্চে ঈদত পোলা খাই না, সন্তানের মুখত লাচ্ছাও তুলে দিবার পারি না। এইবার পপোলা-লাচ্ছা খাবার পারমু।’
কুড়িগ্রামের প্রথম আলোর চরের বাসিন্দা বৃদ্ধ জসিম উদ্দিনের সংসার চলে প্রতিবন্ধী–ভাতা আর মানুষের বাড়িতে স্ত্রীর কাজের টাকায়। ২২ এপ্রিল কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার খাদ্যসামগ্রী পেয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ছাওয়াপাওয়া ধরি খুব কষ্টত পড়ছি। খাবারগুলা দিয়া কী যে উপকার করলেন বা।’
বন্ধুসভার ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরের ১১৪টি বন্ধুসভা গত ৮ এপ্রিল থেকে ২ মে দেশব্যাপী ঈদের উপহারসামগ্রী বিতরণ করে। ৩ হাজার ৭৪৯ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে নতুন জামা ও ৩ হাজার ৯৭১টি পরিবারকে ২৮ লাখ ১০ হাজার ১৭৪ টাকার খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে তারা। পাশাপাশি ময়মনসিংহের বন্ধু শামীমের কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আরও ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬০০ টাকা সহায়তা করেছে। নিজেদের চাঁদা, উপদেষ্টা ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান ও বিভিন্নজনের সহায়তায় সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে সারা দেশের বন্ধুরা এই কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এতে বিভিন্ন স্থানে অনেকেই বড় অঙ্কের টাকা অনুদান প্রদান করেন।
কুড়িগ্রামে একটি বেসরকারি সংস্থার অনুদানে ১০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। আবার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ তাদের ক্যাম্পাসগুলোতে অনুদান বাক্স বসিয়ে অভিভাবক ও অতিথিদের স্বেচ্ছাদানে অর্থ সংগ্রহ করে পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে।
রাজবাড়ী বন্ধুসভা প্রতিটি খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটের সঙ্গে একটি করে মুরগি উপহার দেয়। আবার গাজীপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা শিশুদের রঙিন জামা উপহারের পাশাপাশি তাদের হাত মেহেদির আবিরে রাঙিয়ে তোলেন। রাজবাড়ীর বন্ধুরা প্রতিবন্ধীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু’দের সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী ভাগাভাগি করেন।
চীন বন্ধুসভার বন্ধুরা সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেশে থাকা তাঁদের স্বজন ও বন্ধুদের মাধ্যমে কর্মসূচি পালন করেন। ভৈরব বন্ধুসভা নতুন জামা ও খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি শিশুদের নতুন টাকা ঈদ সালামিও দেয়।
এবার সারা দেশের বন্ধুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ থেকে বিভিন্ন বন্ধুসভাকে ১ লাখ টাকা সহায়তা করা হয় এবং জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ ও মহানগর কমিটি মিলে রাজধানীতে প্রায় দুই লাখ টাকার পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে। এর মধ্যে জাতীয় পর্ষদ তিন দফায় ভাসমান ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, বস্তিবাসী হতদরিদ্র এবং ডে কেয়ার সেন্টারে দুই শতাধিক শিশু ও বয়স্ক মানুষকে নতুন জামা এবং দুই শতাধিক পরিবারকে খাদ্যসহায়তা প্রদান করে।
কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিচিত্র সব মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন বন্ধুরা। এসব অভিজ্ঞতা বন্ধুদের যেমন আবেগতাড়িত করেছে, তেমনি ভবিষ্যতে মানবসেবায় ব্রতী হয়ে ভালো কাজের প্রতি প্রবল স্পৃহা সৃষ্টি করেছে।
সহমর্মিতার ঈদ কার্যক্রমে সর্বোচ্চসংখ্যক পরিবার ও শিশুকে উপহার দেওয়ার পাশাপাশি বৈচিত্র্য বিবেচনায় ১০টি বন্ধুসভাকে কেন্দ্রীয়ভাবে সেরা ঘোষণা করা হয়। ২০ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিভাগীয় বন্ধু উৎসবে তাঁদের সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। সেরা ১০টি বন্ধুসভা হলো কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ক্যামব্রিয়ান কলেজ, চীন, রংপুর, গোয়ালন্দ, সিলেট, ভোলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা।
প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সার্বিক সহযোগিতা ও সভাপতি উত্তম রায়ের নেতৃত্বে এবারের সহমর্মিতার ঈদ কর্মসূচি সমন্বয় করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহতারিমা রহমান। আর বিভাগীয় পর্যায়ে তাঁকে সহায়তা করেন জাতীয় পর্ষদ ও মহানগর বন্ধুসভার সদস্যরা।
সাধারণ সম্পাদক, বন্ধুসভা