টাকার প্রয়োজন হওয়ায় নিজের স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে একই বাসার এক ভাড়াটের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নেন মার্জিয়া। পরে ধার নেওয়া সেই টাকা দিয়ে স্বর্ণালংকার ফেরত চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন শেখ মাসুদ। একপর্যায়ে সেই স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করতে মাসুদ ও তাঁর স্ত্রী রেখা আক্তার মিলে মার্জিয়া আক্তারকে (৩০) হত্যা করেন।
আজ শুক্রবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক ওই জবানবন্দি দেন গ্রেপ্তার মাসুদ। এর আগে আজ দুপুরে ওই দুই আসামি নিয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান সংবাদ সম্মেলন করেন।
মাসুদ মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলোঘর গ্রামের বাসিন্দা। মার্জিয়া মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার চারিগ্রাম গ্রামের মোশারফ হোসেনের মেয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রায় ছয়-সাত বছর আগে স্বামী তালাক দেওয়ার পর থেকে ঢাকার মিরপুরে মাসুদের ভাড়া করা বাসার একটি কক্ষ সাবলেট নিয়ে থাকতেন মার্জিয়া। তিনি স্থানীয় একটি ডেন্টাল হাসপাতালে কাজ করতেন। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় মার্জিয়া নিজের প্রায় দেড় ভরি স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে মাসুদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নেন। মাসুদ ওই স্বর্ণালংকার বন্ধক না রেখে বিক্রি করে দেন। তবে মার্জিয়াকে তিনি বলেন, ২০ হাজার টাকায় তাঁর স্বর্ণালংকার বন্ধক রাখা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি ২০ হাজার টাকা মাসুদকে দেওয়ার পর মার্জিয়া নিজের স্বর্ণালংকার ফেরত চান। এ সময় স্বর্ণালংকার ফেরত না দেওয়ায় মাসুদের সঙ্গে মার্জিয়ার ঝগড়া হয়।
গত ২৪ ডিসেম্বর সকালে বাসায় মার্জিয়াকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মাসুদ। পরে তিনি তাঁর স্ত্রী রেখার সহায়তায় লাশ বস্তাবন্দী করেন। ওই দিন রাতে ভাড়া করা অটোরিকশায় করে বস্তায় ভরা লাশ নিয়ে সিঙ্গাইর উপজেলার ওয়াইজনগর গ্রামের একটি খালের পানিতে ফেলে দেন মাসুদ। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর ১৪ জানুয়ারি ওয়াইজনগর গ্রাম থেকে বস্তাবন্দী মার্জিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে সে সময় নিহত মার্জিয়ার লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে। এরপর গত বুধবার রাতে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা থেকে মাসুদ ও রেখাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশের তোলা ছবি দেখে নিহত মার্জিয়াকে শনাক্ত করেন তাঁর স্বজনেরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিঙ্গাইর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হালিম বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মার্জিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করেন মাসুদ। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা (চাকু) ও মার্জিয়ার মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আজ বিকেলে গ্রেপ্তার মাসুদ ও রেখাকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাসুদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।