কক্সবাজারের রামু

বনের ভেতরে সংকটাপন্ন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আরেকটি হাতি

কক্সবাজারের রামুর বনাঞ্চলে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত বন্যহাতি। আজ সোমবার বিকেলে
সংগৃহীত

কক্সবাজারের রামুতে আরও একটি বন্য হাতিকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হাতিটি উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের গহিন জঙ্গলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত  হাতিটি বাঁচাতে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছেন ভেটেরিনারি সার্জন।

বন বিভাগের স্থানীয় কর্মচারীরা বলেন, গতকাল রোববার সকালের দিকে গুলিবিদ্ধ হাতিটিকে বনের ভেতরে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় কাঠুরিয়ারা। বিকেলে গুলিবিদ্ধ হাতিটির সন্ধান পান বনকর্মীরা। এরপর হাতিটি বাঁচাতে চেষ্টা চালাচ্ছে বন বিভাগ।

হাতিটির চিকিৎসা দিচ্ছেন চকরিয়া ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান। আজ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাতির পাশে থেকে চিকিৎসাসেবা দেন তিনি। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিন (রোববার) ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির অস্ত্রোপচার করা হয়। হাতিটির সামনের বাঁ পায়ে ভারী অস্ত্রের একটি গুলি লাগে। আর পেটে সাতটি ছররা গুলি লাগে। আজ হাতিটিকে স্যালাইন ও ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত ২০-২৫ দিন আগে হাতিটিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। হাতিটির জীবন সংকটাপন্ন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. তহিদুল ইসলাম  প্রথম আলোকে বলেন, ছররা গুলির আঘাতে গুরুতর আহত বন্য হাতিটি রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। কারা গুলি করেছে, তার অনুসন্ধান চলছে। এরপর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রামুর বনাঞ্চলে পড়ে আছে মৃত হাতিটি। রোববার বিকেলে

এদিকে গত রোববার রামু দক্ষিণ মিঠাছড়ির খরলিয়াছড়ার শাইরার ঘোনা এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলি ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মেরে ফেলা অপর হাতিটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা ইশরাত ফাতেমা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রামু উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন জুলকার নাইম হাতিটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। ভেটেরিনারি সার্জনের উদ্ধৃতি দিয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের পানেরছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক শকের পাশাপাশি গুলিও করা হয়েছে। এর বাঁ পাশের একটি পায়ে গুলির আঘাত পাওয়া গেছে। সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছিল।

তৌহিদুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের পর হাতিটিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে নুরুল হক নামের একজনকে আসামি করে রামু থানায় অস্ত্র ও বন্য প্রাণী হত্যার অপরাধে মামলা হয়েছে।

বন বিভাগের দাবি, হাতিটিকে মারার জন্য ফাঁদ পাতা হয়েছিল। স্থানীয়রা জানান, শাইরার ঘোনা এলাকায় নুরুল হক মাছের খামার ও ধানখেত রক্ষার জন্য বনাঞ্চলের পাশে প্রায় ১০০ ফুট বৈদ্যুতিক তার স্থাপন করে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে রেখেছিলেন। ওই জায়গা দিয়ে প্রায় সময় হাতিরা চলাচল করে।

প্রায় সময় রাতের বেলায় বন্য হাতি লোকালয়ের কাছাকাছি এসে ধানখেতসহ বিভিন্ন ফসল খেয়ে ফেলে এবং নষ্ট করে বলে নুরুল হকের নেতৃত্বে এলাকার কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে হাতিটিকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে ঘটনা জানাজানির পর থেকে নুরুল হকের মুঠোফোন বন্ধ ও তিনি পলাতক থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে ৬ নভেম্বর চকরিয়ায় তিন বছর বয়সী একটি বন্য হাতিকে গুলি করে মারে দুর্বৃত্তরা। এরপর ওই হাতিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। ৮ নভেম্বর সকালে স্থানীয় বন বিভাগ উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের গহিন জঙ্গলের কালাপাড়া এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে। চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুপন নন্দী ও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন। সুপন নন্দী প্রথম আলোকে জানান, স্ত্রী হাতিটির বয়স আনুমানিক তিন বছর। হাতিটির কপালে একটি গুলি করা হয়েছে। গুলির কারণে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাতিটি মারা গেছে।

কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ধানখেত রক্ষার জন্য স্থানীয়রা বৈদ্যুতিক শক ও গুলি করে বন্য হাতিগুলো হত্যা করছেন। গত দুই বছরে কক্সবাজার অঞ্চলে অন্তত ১৩টি বন্য হাতি হত্যা করা হয়েছে।