রাজশাহীর কাটাখালী

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে পৌর মেয়রের বিতর্কিত মন্তব্যের অডিও ভাইরাল

আব্বাস আলী
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ-সংক্রান্ত একটি অডিও কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অডিওতে কথা বলা ব্যক্তিটি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত মেয়র আব্বাসের বলে দাবি করা হচ্ছে।

আব্বাস আলী রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে টানা দুই মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব আছেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অডিওটি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এরই মধ্যে কাটাখালী পৌরসভার কাউন্সিল ও পৌর আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।

এই অডিও যে কাটাখালী মেয়রের, এটা যে কেউ শুনে বলে দিতে পারবেন। তাঁর (আব্বাস আলী) পরিবার আওয়ামী লীগের কেউ নয়। এটা আবার প্রমাণিত হলো।
মোতাহার হোসেন, পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক

অডিওর বিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে মেয়র আব্বাস আলীকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি। মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দুপুরের পর কাটাখালী পৌরসভায় গিয়েও মেয়রকে পাওয়া যায়নি।

পৌরসভা কার্যালয় হিমেল নামের এক কম্পিউটার অপারেটর বলেন, তাঁরা অডিও ফাঁসের বিষয়ে কিছু জানেন না। পৌরসভার অফিস সহকারী জাকির হোসেন বলেন, মেয়র বিকেল পর্যন্ত পৌরসভায় আসেননি।

তবে একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেয়র দাবি করেছেন, অডিওটি তাঁর নয়। ম্যুরাল করা যাবে না, ম্যুরাল করলে পাপ হবে, এ ধরনের কথা তাঁর সঙ্গে করাও হয়নি।

পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই অডিও যে কাটাখালী মেয়রের, এটা যে কেউ শুনে বলে দিতে পারবেন। তাঁর (আব্বাস আলী) পরিবার আওয়ামী লীগের কেউ নয়। এটা আবার প্রমাণিত হলো।

মোতাহার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে তাঁরা বুধবার প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন। তাঁরা সেখানে মেয়র আব্বাস আলীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলবেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি করে কেউ রক্ষা পাননি। গাজীপুরে মেয়র জাহাঙ্গীরও পাননি। এই কথোপকথন প্রমাণিত হলে কেন্দ্র থেকে নিশ্চয় বড় ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
অনিল কুমার সরকার, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ

ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিওতে মেয়র আব্বাস একজনকে বলছেন, ‘আমাদের যে অংশটা হাইওয়েতে। সিটি গেট আমার অংশে। ফার্মকে দিয়েছি তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দিবে, ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা। কিন্তু একটু থেমে গেছি গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে যে ম্যুরালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর। এটা ইসলামি শরিয়ত অনুপাতে সঠিক নয়। এ জন্য আমি ওটা থুব না। সব করব, যা কিছু আছে। খালি শেষ মাথাতে যেটা ওটা।’

অডিওতে আব্বাস আলীকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, আমাকে যেভাবে বুঝাইল, ম্যুরালটা দিলে ঠিক হবে না। আমার পাপ হবে। এটা কেন দিব, দিব না। আমি তো কানা না, আমাকে যেভাবে বোঝাইছে, তাতে আমার মনে হয়েছে যে ম্যুরালটা হলে আমার ভুল হবে। এ জন্য চেঞ্জ করছি। এ খবরটাও যদি আবার যায়, তাহলে আমার রাজনীতির বারোটা বাজবে, আরে যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল দিতে চাচ্ছে না। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আল্লাহকে নারাজ করব নাকি। এটা নিয়ে রাজনীতি করবে শিউর। রাজনীতি করলে কিছু করার নাই। তাই বলে মানুষকে সন্তষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না তো।’

এই কথাগুলো বলার পর তিনি ৯৪ শতাংশ ভোটে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন, সে কথা মনে করিয়ে দেন। কথাগুলো কারও সঙ্গে মেয়র করছিলেন। তিনিও অস্পষ্ট কণ্ঠে মেয়রের কথায় সায় দিচ্ছিলেন। তবে কবে কোথায় এই কথোপকথন হয়েছে, তা জানা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের’ অধীনে নগরের তালাইমারী থেকে কাটাখালী পৌরসভা পর্যন্ত ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয় লেনের রাস্তা নির্মাণকাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। এর শেষ অংশ মিলেছে কাটাখালী পৌরসভার সীমানায়। সেখানে একটি দৃষ্টিনন্দন ফটক বা প্রবেশদ্বার হবে।

মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কাটাখালী পৌরসভায় আসেননি মেয়র আব্বাস আলী

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এই প্রকল্পের পরিচালক নূর ইসলাম তুষার প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের শেষ মাথায় ও কাটাখালী লাগোয়া মহাসড়কে একটি দৃষ্টিনন্দন ফটক হবে। ঢাকা থেকে কেউ প্রবেশ করলে যেন বুঝতে পারেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে প্রবেশ করছেন। তবে এই গেটে কী থাকবে, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি অবগত নন।

অডিওর বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অডিওটি শুনেছেন। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি কেন্দ্রেও জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি করে কেউ রক্ষা পাননি। গাজীপুরে মেয়র জাহাঙ্গীরও পাননি। এই কথোপকথন প্রমাণিত হলে কেন্দ্র থেকে নিশ্চয় বড় ধরনের পদক্ষেপ নেবে।

এদিকে কাটাখালী পৌরসভার কাউন্সিলরদের একটি অংশ প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় কাটাখালী বাজারে এই কর্মসূচি পালন করবে। এতে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগও থাকবে। পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মনজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে কটূক্তির করার প্রতিবাদে বুধবার সকালে তাঁরা প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও থাকবেন।