বগুড়ার শহরের চকসূত্রাপুর জুবিলি স্কুল লেনের মেসমালিক আশরাফ আলী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ৬৮ শিক্ষার্থীর ভাড়া না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ শুক্রবার তিনি মুঠোফোনে শিক্ষার্থীদের এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
এসএ ভিলা নামের ওই ছাত্রাবাসে ৬৮ জন শিক্ষার্থী থাকেন। তাঁরা সরকারি আজিজুল হক কলেজে পড়াশোনা করেন। মার্চ মাস থেকে তাঁদের ওই মেসে ভাড়া দেওয়া লাগবে না।
আশরাফ আলী চকসূত্রাপুরের বাসিন্দা। বগুড়া শহরের চুড়িপট্টিতে তাঁর প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবসা রয়েছে। আশরাফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, সাত বছর ধরে তিনি ছাত্রাবাস চালাচ্ছেন। মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ভাড়া পান। কিন্তু করোনা সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা মেসে নেই। অনেকেই টিউশনি করে মেসভাড়া ও পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। এই সংকটে অভিভাবকেরাও কষ্টে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নিজেরও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেড় মাস ধরে মার্কেট বন্ধ। নিজের সংকট দেখলে অন্যদের কষ্টও বোঝা যায়। এমন সংকটকালে মেসভাড়া চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হবে। করোনা সংকট দূর না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মেসভাড়া দিতে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছি।’
এসএ ভিলা নামে ছাত্রাবাসের বাসিন্দা এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিকুল ইসলাম ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯ মার্চ থেকে প্রশাসনের নির্দেশে বগুড়া শহরের সব মেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করলেও কয়েক দিন ধরে অধিকাংশ মেসের মালিক বকেয়া ভাড়া পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। অনেক মেসে মালিকেরা তালা ঝুলিয়েও দিয়েছেন। সেদিক থেকে আমাদের মেসমালিক ব্যতিক্রম। করোনা সংকট কেটে না যাওয়া পর্যন্ত ৭০ শিক্ষার্থীকে কোনো প্রকার মেসভাড়া দিতে হবে না বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। ভাড়া মওকুফের ঘোষণা দিয়ে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
ওই মেসের আরেক বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন জানান, বর্তমানে মেসে সদস্যসংখ্যা ৬৮। করোনা সংকট কেটে না যাওয়া পর্যন্ত মালিক সবার মেসভাড়া মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি শুধু গ্যাস ও বিদ্যুতের ন্যূনতম বিল এবং নিরাপত্তারক্ষীর বেতন শোধ করতে বলেছেন।
এদিকে, শহরের সব মেসের ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি আজিজুল হক কলেজের ৪২ হাজার শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী মেসে থেকে পড়াশোনা করছেন। শহরে প্রায় ২ হাজার মেস রয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে ১৯ মার্চ থেকে তাঁরা মেস ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। কিন্তু মেসের মালিকেরা মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের ভাড়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল পরিশোধের জন্য প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছেন। মেসমালিকদের অমানবিক আচরণে অনেকেই দিশেহারা।