বগুড়ায় বিষাক্ত মদ্যপানে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন গতকাল সোমবার রাতে মারা গেছেন। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় বাড়িতে মারা গেছেন দুজন রিকশাচালক। এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় মদ্যপানে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১০।
নতুন করে মারা যাওয়া তিনজন হলেন শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া এলাকার প্রেমনাথ রবিদাস (৭০), বগুড়া সদরের ফাঁপোড় এলাকার রিকশাচালক জুলফিকার রহমান (৫৬) ও ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার রিকশাচালক আবদুল জলিল (৬৫)।
এর আগে গতকাল বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকার কারখানাশ্রমিক পলাশ (৩৪), শহরের কাটনারপাড়া এলাকার হোটেলশ্রমিক সাজু মিয়া (৫৫), পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়া এলাকার সুমন রবিদাস (৩৮), বগুড়া শহরের চারমাথা ভবেরবাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন (৫৫), শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া এলাকার রাজমিস্ত্রি রমজান আলী (৬০), কাটনারপাড়া হটুমিয়া লেনের বাবুর্চি মোজাহার আলী (৭৫) ও কাহালু পৌর এলাকার উলুট্র মহল্লার অটোরিকশার চালক কালাম (৫০)।
মদ্যপানে অসুস্থ হয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শহরের পুরান বগুড়া তিনমাথা এলাকার রামনাথ রবিদাস (৬৫), শিববাটি এলাকার হোটেলশ্রমিক রঞ্জু মিয়া (৪০), ফুলবাড়ী এলাকার ইলেকট্রনিকস মিস্ত্রি আইয়ুব আলী (৩৯) ও একই এলাকার পায়েল (৩৮)। অন্যদিকে এ ঘটনায় রঞ্জুর ভাই বাদী হয়ে গতকাল রাতে থানায় মামলা করেছেন।
প্রেমনাথের ছোট ছেলে সুজন রবিদাস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা পেশায় মুচি। জুতা সেলাই করে সংসার চালাতেন। তাঁর দাবি, বাবা প্রেমনাথ, চাচা রামনাথ, বড় ভাই সুমন এবং একই এলাকার রাজমিস্ত্রি রমজান আলী শহরের তিনমাথা এলাকার খান হোমিও হলের শাহিনুর ইসলাম নামের একজনের কাছ থেকে নিয়মিত মদ কিনে খেতেন। একই দোকান থেকে মদ কিনে তাঁরা রোববার কোনো একসময় পান করেন। রাতে প্রথমে রমজান আলী অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর ভোরের দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান ভাই সুমন। গেল রাতে মারা যান তাঁর বাবা প্রেমনাথ।
বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন, রিকশাচালক আবদুল জলিলের বাবার নাম আবদুর রহমান। তাঁর গ্রামের বাড়ি কাহালু উপজেলার শেখ কলমা গ্রামে। তিনি শহরের ফুলবাড়ী মধ্যপাড়া শ্বশুরবাড়িতে থেকে শহরে রিকশা চালাতেন। শহরের একটি দোকান থেকে অ্যালকোহল কিনে পান করে অসুস্থ হয়ে রোববার সন্ধ্যার দিকে বাড়িতেই মারা যান তিনি। তাঁর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির বলেন, প্রেমনাথ রবিদাস গতকাল রাত আটটার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অন্য দুজন মারা যান সন্ধ্যায় নিজ নিজ বাড়িতে। তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রঞ্জু নামে এক ব্যক্তির ভাই মনোয়ার হোসেন গতকাল রাতে থানায় মামলা করেছেন।
ওসি হুমায়ূন কবির বলেন, রিকশাচালক জুলফিকার রহমানের বাবার নাম মৃত আবদুল মালেক। তাঁর বাড়ি বগুড়া সদরের ফাঁপোড় এলাকায়। তিনি পেশায় রিকশাচালক। মদ্যপানে তিনি সোমবার সন্ধ্যায় মারা যান। তাঁর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
অসুস্থ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শহরের পারুল হোমিও হল এবং খান হোমিও হল নামের দুটি দোকান থেকে অ্যালকোহল কিনে পান করে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘটনার পর থেকে খান হোমিও হল বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন মালিক শাহিনুর রহমান। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ। লাপাত্তা পারুল হোমিও হলের মালিক নুরুন্নবী শেখও।
ওসি হুমায়ূন কবির বলেন, অভিযুক্ত হোমিও ব্যবসায়ীদের আটকের চেষ্টা চলছে।