করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৬ দিন পর বগুড়ায় আজ সোমবার সকাল থেকে দূরপাল্লার, অভ্যন্তরীণ ও আন্তজেলা বাস চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ভাড়া বৃদ্ধির কারণে বাসযাত্রায় তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি যাত্রীদের। রাজধানী ঢাকার পথে সীমিতসংখ্যক দূরপাল্লার কোচ চলাচল শুরু হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত শহরের সাতমাথা এবং ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, এসআর ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, শাহ ফতেহ আলী পরিবহন, নাবিল পরিবহন, আগমনী পরিবহনসহ অধিকাংশ দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার বন্ধ। সকাল নয়টা পর্যন্ত এসব কোম্পানির কোনো বাস চলাচল শুরু হয়নি। সকালের দিকে মানিক এন্টারপ্রাইজের দুটি এসি হুন্দাই বাস, টিআর ট্রাভেলস, আরকে ট্রাভেলসসহ কয়েকটি কোম্পানির নন–এসি বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। যাত্রী ওঠানোর আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা অনেকটা উপেক্ষিত। যাত্রীদের কাছেও ছিল না স্যানিটাইজার।
ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা শামসুদ্দিন হায়দার বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার তোয়াক্কা না করে এত দিন বাস–মালিকেরা ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসে ১ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করতেন। ঈদে ভাড়া বাড়িয়ে দিতেন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় নিয়ে এত দিন কেউ মুখ খোলেনি। এখন ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করায় বগুড়া থেকে ঢাকায় যেতে এসি বাসে ১ হাজার ৬০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। এই পরিমাণ ভাড়া মালিকেরা কিসের ভিত্তিতে আদায় করছেন, তার কোনো জবাবদিহি নেই। অফিস খোলায় বাধ্য হয়ে এত টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে।
সাতমাথা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া নন–এসি বাসের যাত্রী পোশাককর্মী রেহেনা আকতার বলেন, লকডাউনের আগে বগুড়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত এমন বাসের ভাড়া ছিল জনপ্রতি ৩৫০ টাকা। এখন ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৫৮০ টাকা। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই বাড়তি ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে।
এসআর ট্রাভেলসের সাতমাথা কাউন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, এসআর ট্রাভেলস ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের বহরে এসি ও নন–এসি বাস ৩০ মিনিট থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা পরপর চলাচল করে। এক আসনে একজন যাত্রী তুলে ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিয়ে লোকসান গুনতে হবে। এ কারণে বাস চালাচ্ছেন না।
উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
সোমবার সকালে শহরের সাতমাথা থেকে ছেড়ে গেছে বগুড়া-ময়মনসিংহ, বগুড়া-রাজশাহী, বগুড়া-রংপুর, বগুড়া-জয়পুরহাট, বগুড়া-শেরপুর রুটের বেশ কিছু বাস। এসব বাসে যাত্রী তোলার আগে কোনো স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়নি। ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির কারণে যাত্রীও ছিল কম। অনেক বাস চালক-শ্রমিকদের মুখে ছিল না মাস্ক। অনেক বাসে মাস্ক ছাড়া পরিবহনশ্রমিকদের সিগারেট টানতে দেখা গেছে।
সকাল পৌনে আটটায় বিআরটিসির সাতমাথা ডিপো থেকে জয়পুরহাট এবং আটটায় নওগাঁর উদ্দেশে দুটি বাস ছেড়ে গেছে। ডিপোর সামনে মাস্ক ছাড়া সিগারেট টানতে টানতে কলারম্যানদের যাত্রীদের উদ্দেশে হাঁকডাক শোনা গেছে। জয়পুরহাট ও নওগাঁর একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, সরকার একটি আসনে একজন যাত্রী তোলা এবং ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির নির্দেশনা জারি করেছে। অথচ সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি ৫৬ আসনের বাসে গড়ে মাত্র ৯ থেকে ১০ জন যাত্রী কম তুলছে। তবে ভাড়া ঠিকই বাড়তি নেওয়া হচ্ছে।
জয়পুরহাটের একজন যাত্রী অভিযোগ করেন, ৫৬ আসনের বাসে জয়পুরহাটের ভাড়া ছিল ৭০ টাকা। এখন ১১৫ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। জনপ্রতি ৪৫ টাকা হিসেবে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২ হাজার ৫২০ টাকা। বাসে যাত্রী সুরক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই।
এ নিয়ে বিআরটিসি বগুড়া ডিপোর কেউ কথা বলতে রাজি হননি।