রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

বক্তব্য দিতে আসেননি অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা

ফারহানা ইয়াসমিন
ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় এক সপ্তাহেও তদন্তকাজ শেষ হয়নি। একই সঙ্গে এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে আসেননি।

ওই ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এখনো তদন্তের কাজ শেষ হয়নি। অভিযুক্ত শিক্ষক এখন পর্যন্ত তাঁর বক্তব্য দিতে আসেননি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত খুদে বার্তা ও ই-মেইলের মাধ্যমে পত্র প্রেরণ করি। এর জবাবে তিনি (ফারহানা ইয়াসমিন) মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করে দুই সপ্তাহের সময় চেয়েছেন। মানবাধিকার কমিশনসহ সরকারি বিভিন্ন আইনি প্রতিষ্ঠানের চাপ থাকায় ৭ অক্টোবরের মধ্যে শিক্ষক ফারহানা ইসলামকে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।’

এদিকে তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। গত রোববার সকাল থেকে নির্যাতিত ১৩ ছাত্র কমিটির কাছে উপস্থিত হয়ে ও অসুস্থ এক ছাত্র হাসপাতাল থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী ১৫ শিক্ষার্থী, ৩ শিক্ষক, ৫ কর্মচারী ও ৫ জন অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি গত তিন বছরে অভিযুক্ত শিক্ষকের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’র বর্ণনা দিয়ে সাক্ষ্য দেন বিভিন্ন বিভাগের আরও আট শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়েছেন।

২৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ছাত্রের মাথার চুল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন কাঁচি দিয়ে কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানার অপসারণ দাবিতে আন্দোলন ও অনশন শুরু করেন। পরে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল গত রোববার।

তদন্ত কমিটি ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সেমিনার কক্ষে ১৪ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে পৃথকভাবে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রত্যেকেই চুল কেটে দেওয়ার বর্ণনা দেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অনেকেই এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র এ কে এম নাজমুল হোসাইন।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাসে গত শনিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে আন্দোলন শিথিল করেন। তবে রোববার সকাল থেকে দিনভর তাঁরা একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বরখাস্ত না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থান থেকে পিছু হটবেন না বলে ঘোষণা দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অপর দুই মুখপাত্র আবু জাফর ও শামীম হোসেন জানান, তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষীরা শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন নিজ হাতে কাঁচি দিয়ে ১৪ ছাত্রের মাথার চুল কেটে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এরপরও যদি তাঁকে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী বরখাস্ত করা না হয়, তবে আবারও কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা ট্রেজারার আবদুল লতিফ বলেন, ওই ঘটনায় বর্তমানে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

এদিকে শিক্ষক ফারহানাকে অপসারণের দাবিতে এবং শিক্ষার্থীদের চুল কাটার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা না দেওয়ার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি আবারও জোরালো হতে শুরু করেছে।