সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নুনা ট্রেডার্স ফাস্ট বিল্ড জেডি অবৈধভাবে এই মাটি কাটছে বলে অভিযোগ।
ঢাকার ধামরাইয়ের রাজাপুর কহেলা এলাকায় বংশী নদীর ওপর সদ্য নির্মিত সেতুর নিচ থেকে সপ্তাহখানেক ধরে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নুনা ট্রেডার্স ফাস্ট বিল্ড জেডি অবৈধভাবে এই মাটি কাটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ধামরাই উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে বংশী নদীর ওপর ৭৫ মিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২২ টাকা। ফাহিম কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর কাজ পেয়েছিল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আংশিক কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর আরও এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হলেও ওই প্রতিষ্ঠানও কাজ সমাপ্ত না করেই কাজ বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪১ হাজার ২৫১ টাকায় সেতু নির্মাণের কাজ পায় নুনা ট্রেডার্স ফাস্ট বিল্ড জেডি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই টাকায় সেতু নির্মাণের পাশাপাশি দুই পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দেওয়ার কথা।
নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুল হককে। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি না নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেতুর নিচে বংশী নদী থেকে মাটি কেটে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করছেন। ফলে সেতুর স্তম্ভ (পিলার) হুমকির মুখে পড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, একটি এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে সেতুর নিচে বংশী নদী থেকে মাটি কেটে সেতুর দুই পাশে ফেলা হচ্ছে। মাটি কাটার ফলে সেতুর স্তম্ভ (পিলার) ঘেঁষে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে, যা সেতুর জন্য হুমকি বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা।
মোট ব্যয় থেকে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ওই টাকায় সংযোগ সড়কের জন্য মাটি কেনার কথা। অনুমতি ছাড়া নদী থেকে মাটি কেটে থাকলে ঠিকাদারের লোকজন তা অন্যায় করেছেন।আজিজুল হক, উপজেলা প্রকৌশলী
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ঠিকাদারের লোকজন সেতুর নিচ থেকে মাটি কাটছেন।
অনুমতি ছাড়া নদী থেকে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে সেতুর নির্মাণকাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা এম এ আজিজ বলেন, ‘সরকারি কাজের জন্য সরকারি জায়গা থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে অনুমতি নিতে হবে কেন? এ ছাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুল হক সব জানেন।’
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুল হক বলেন, মোট ব্যয় থেকে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ওই টাকায় সংযোগ সড়কের জন্য মাটি কেনার কথা। অনুমতি ছাড়া নদী থেকে মাটি কেটে থাকলে ঠিকাদারের লোকজন তা অন্যায় করেছেন। তবে সেতুর নিচ থেকে মাটি কাটলেও স্তম্ভের (পিলার) কোনো ক্ষতি হবে না।
জানতে চাইলে ধামরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল হক বলেন, সেতু নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনুমতি ছাড়া নদী থেকে মাটি কেটে থাকলে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।