ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে ফেরিতে যাত্রী উঠেতে দিচ্ছে না, অবৈধ ট্রলার-স্পিডবোটে করে চলাচল করছেন যাত্রীরা। আজ শনিবার বেলা ১১টায়
ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে ফেরিতে যাত্রী উঠেতে দিচ্ছে না, অবৈধ ট্রলার-স্পিডবোটে করে চলাচল করছেন যাত্রীরা। আজ শনিবার বেলা ১১টায়

ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথ

ফেরিতে যাত্রী ওঠা বন্ধ, ট্রলার-স্পিডবোটে না নেই

কর্মস্থলে ফিরতে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। তবে ফেরিতে উঠতে না দেওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার, স্পিডবোটে করে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথ পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা। এই সময়ে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে সি-সার্ভে সনদধারী নৌযান ছাড়া অন্য কোনো নৌযানে যাত্রী পারাপার, চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ইলিশা ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় সহস্রাধিক যাত্রী। ভিড় করেছেন কর্মস্থলে ফেরার জন্য। লক্ষ্মীপুর হয়ে তাঁরা কর্মস্থলে ফেরার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফেরি না পেয়ে কেউ ট্রলারে, কেউ বা স্পিডবোটে উঠছেন। ট্রলারে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। সময় লাগছে ৩ ঘণ্টা। স্পিডবোটের ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকা। সময় লাগে পৌনে এক ঘণ্টা। কষ্ট ও ঝুঁকি বেশি স্পিডবোটে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ২০০-২৫০ যাত্রী রোদের মধ্যে ট্রলারে উঠছেন।

চট্টগ্রামে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ঘাটে এসেছেন ভোলার সদর উপজেলার ভেদুরিয়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম (৩৪)। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ফেরিতে উঠতে দিচ্ছে না, তাই ট্রলারে যাচ্ছেন। কর্মস্থলে ফিরতে হবে। লকডাউনে বাড়িতে বসে খেয়ে পকেটের টাকা শেষ। কাজও নেই। তাই চট্টগ্রামে যাচ্ছেন। কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে।

চট্টগ্রামে কীভাবে যাবেন জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, ‘কাডা লাইনে।’ সেটা আবার কী—প্রশ্ন করতেই সাইফুল বলেন, ‘যদি খালি ট্রাক পাই, উডি যামু। নাইলে অটো রিকশায়, বারাইছি যহোন, আল্লাহ নিবোই।’

ট্রলারচালকেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুই ঘাটের ইজারাদারদের ট্রলারপ্রতি ৬০০ টাকা, স্পিডবোট প্রতি ৪০০ টাকা দিতে হচ্ছে। আবার আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের নাম করে একদল দালাল জনপ্রতি ১০০ টাকা নিচ্ছে।

যাত্রীরা জানান, ফেরিতে মালবাহী গাড়ি যায়। যাত্রীদের উঠতে দেয় না। যদি যাত্রীদের উঠতে দিত, তাহলে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি কমে যেত। ওঠার জন্য তাঁরা ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন, কিন্তু ফেরিতে যাত্রীদের পুলিশ-কোস্টগার্ডের সদস্যরা উঠতে দিচ্ছেন না। দু-একজন উঠলে পিটিয়ে নামিয়ে দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা ছোট ছোট ট্রলারে উঠে উত্তাল মেঘনা পার হচ্ছেন।

মেঘনা–তেঁতুলিয়া নদীতে ছোট ছোট ট্রলারে যাত্রী পার হচ্ছে।

ফেরির ইজারাদার আক্তার হোসেন বলেন, ইলিশা ফেরিঘাটে নৌ থানা ও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। আছে কোস্টগার্ডের টহল। তার মধ্যেই ট্রলারে অবাধে যাত্রী পার হচ্ছে। টাকা দিলে তিনিও ফেরিতে যাত্রী নিতে পারেন, কিন্তু তাতে পোষায় না।

ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক পারভেজ খান বলেন, গত কয়েক দিন কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীরা ঘাটে খুব জমায়েত হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ফেরিতে উঠতে দিচ্ছে না। তবে ট্রলার-স্পিডবোটে যাচ্ছে। কেন-কীভাবে যাচ্ছে, তা বিআইডব্লিউটিএ বলতে পারবে। এটা তাদের ব্যাপার।

বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদী বন্দরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে এ সময়ে সি-সার্ভে সনদধারী নৌযান ছাড়া অন্য কোনো নৌযানে যাত্রী পারাপার, চলাচল নিষিদ্ধ। তারপরও মেঘনা–তেঁতুলিয়া নদীতে ছোট ছোট ট্রলারে যাত্রী পার হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনকে বলা ছাড়া তাঁর কিছু করার নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করবে স্থানীয় প্রশাসন।

ইলিশা নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজন চন্দ্র পাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে টাকা তোলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ট্রলারে-স্পিডবোটে চুরি করে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। আর জনপ্রতি তাদের নামে টাকা ওঠানোর বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, ছোট ট্রলারে অবৈধ যাত্রী পারাপার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।