‘বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ট্রাকটি কিনেছিলাম। এই ট্রাকের আয় দিয়েই আমার চার সদস্যের সংসার চলত। পাটুরিয়ায় ফেরিডুবিতে ডুবে গেছে আমার উপার্জনের পথও।’ আজ বৃহস্পতিবার সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটে কথাগুলো বলছিলেন ফেরির সঙ্গে ডুবে যাওয়া ট্রাকের মালিক সোয়েবুর রহমান (৩৮)।
গতকাল বুধবার সকালে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে রো রো (বড়) ফেরি আমানত শাহ ডুবে যায়। ওই ফেরিতে সোয়েবুরের ট্রাকটি ছিল। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালী সদরের দক্ষিণ সবুজবাগ এলাকায়। ফেরি ডুবে যাওয়ার খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন তিনি।
সোয়েবুর রহমান বলেন, তিনি পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি সম্পন্ন করেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে চাকরি ছেড়ে এক বছর আগে একটি ব্যাংক থেকে ২৫ লাখ টাকা লোন নিয়ে ট্রাকটি কেনেন। এখনো সেই লোনের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি তিনি।
উদ্ধার অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোয়েবুর রহমান বলেন, উদ্ধার অভিযান সন্তোষজনক নয়। উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ আসার কথা গতকালই। আজ সকাল সাড়ে দশটায়ও তা আসেনি। বুধবার উদ্ধার করা ট্রাকগুলো নদীতেই রাখা হয়। এতে ট্রাকের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়নি। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না, তাও জানি না। লোনের টাকায় ট্রাকটি কিনেছিলাম। ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা না হলে পরিবার নিয়ে পথে বসে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
সোয়েবুর রহমানের মতো ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যবাহী গাড়ির মালিকেরা ঘটনাস্থলে আসছেন। তাঁদের সবার মুখে হতাশা ও অনিশ্চয়তার ছাপ।