ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ৬৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ব্যাংক হিসাবে গত ফেব্রুয়ারি মাসের সম্মানী ভাতার টাকা আসেনি। তবে তাঁরা জানুয়ারি মাসের ভাতার টাকা পেয়েছেন। ব্যাংকে খোঁজ নিয়েও টাকা না আসার ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধারা কিছুই জানতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণ প্রয়োজন। এর মধ্যে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশও প্রয়োজন। কিন্তু নান্দাইল উপজেলার ৭৬ জন ভাতাভোগীর ব্যাপারে জামুকার সুপারিশ ছিল না। বিষয়টি ধরা পড়লে যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত বছর যাচাই-বাছাই শেষে ৬৩ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নিয়মিতকরণের জন্য সরাসরি সুপারিশ করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাজহারুল হক ফকির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গতকাল সোমবার বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের ভাতার টাকা জমা হয়নি। আবার কেউ কেউ ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা তুলেছেন।
নান্দাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মো. আবদুল মান্নান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানুয়ারি মাসের ভাতার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু ফেব্রুয়ারির টাকা তাঁর ব্যাংক হিসাবে আসেনি। তিনি প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন, জামুকার সমন্বিত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তিকরণের কাজ শেষ হওয়ার পরে ভাতার টাকা পাঠানো হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রথম আলোকে বলেন, ভারতীয় তালিকা ও লাল মুক্তিবার্তায় যাঁদের নাম নেই, তাঁদের ব্যাংক হিসাবে ভাতার টাকা আসেনি। এ ছাড়া জামুকা প্রণীত সমন্বিত তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁরা ভাতা পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংরক্ষিত তালিকা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হতো। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট অব ইনফরমেশন) সফটওয়্যারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এমআইএসে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতির মাধ্যমে ভাতার টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের নান্দাইল শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাতার অর্থ লেনদেনে প্রত্যেক বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে পৃথক পৃথক ব্যাংক হিসাব আছে। ইএফটির মাধ্যমে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে ভাতার টাকা প্রত্যেকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। খুদে বার্তার মাধ্যমে হিসাবধারী মুঠোফোনে টাকা জমা হওয়ার তথ্য পেয়ে থাকেন।
সোনালী ব্যাংকের নান্দাইল শাখার ব্যবস্থাপক মো. জহিরুল হক বলেন, তাঁর শাখায় ৬৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ব্যাংক হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসের ভাতার টাকা জমা হয়নি। টাকা জমা না হওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো চিঠিও পাননি। তবে ৬৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানুয়ারির ভাতা পেয়েছেন।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল মনসুর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ব্যাংক হিসাবে ভাতার টাকা আসেনি বলে শুনেছেন। এ–সংক্রান্ত কোনো চিঠি তাঁর কার্যালয়ে আসেনি।
এদিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই উপজেলার পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেব্রুয়ারি মাসের ভাতা পাননি।