ফেনীতে একটি বেসরকারি হাফেজি মাদ্রাসা ভবনের ষষ্ঠতলা থেকে পড়ে এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার ভোর চারটার দিকে শহরের পুলিশ লাইনসের বিপরীতে মেজবাউল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফেনী সদর মডেল থানার পুলিশ ওই ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত ওই মাদ্রাসাছাত্রের নাম মো. ইসরাফিল ইফাদ (১৪)। সে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের প্রবাসী মো. ইয়াছিনের ছেলে। তার পরিবার ফেনী শহরে থাকে।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসরাফিল ইফাদ গত চার বছর থেকে এ মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল। ইতিমধ্যে সে ২৬ পারা পর্যন্ত মুখস্থ করেছে। ওই মাদ্রাসা ভবনের চতুর্থ তলায় একটি বিশাল কক্ষে চারজন শিক্ষক ও ৮০ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে থাকত। ভবনের পঞ্চম তলায় ওয়াশরুম। ষষ্ঠতলা নির্মাণাধীন, শুধু ছাদ হয়েছে। তবে ষষ্ঠতলার ছাদের চারপাশে চার ফুট উঁচু লোহার রেলিং দেওয়া আছে।
ইসরাফিল ইফাদের স্বজন মো. ইলিয়াছ জানান, প্রায় ১৩-১৪ দিন আগে মাদ্রাসাটির এক শিক্ষক ইসরাফিলকে বাজার থেকে ডিম কেনার জন্য ৫০০ টাকা দেন। নিজের পকেটে থাকা আরও কিছু টাকাসহ শিক্ষকের দেওয়া টাকাগুলো হারিয়ে ফেলে সে। টাকা হারিয়ে ওই দিন সে মাদ্রাসায় ফিরে যায়নি। নিখোঁজের খবর পেয়ে তার মা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। খুঁজে পেয়ে তিনি ইসরাফিলকে বাসায় নিয়ে যান। এরপর ১৪ মে তাকে আবার মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা তাকে রাখতে চাননি। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে মুচলেকা দিয়ে তাকে মাদ্রাসায় রেখে আসা হয়।
মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীরা জানান, আজ শনিবার ভোর পৌনে চারটার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঘুম থেকে উঠে পঞ্চম তলায় ওয়াশরুমে যান। ফজরের নামাজের পরই হেফজ বিভাগের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। ইসরাফিল ও তার এক বন্ধু ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পর ছয়তলায় শুকোতে দেওয়া জামাকাপড় আনার জন্য যেতে চায়। তবে ছয়তলার সিঁড়ি অন্ধকার দেখে ওই বন্ধু আর যায়নি। ইসরাফিল একাই ছয়তলায় যায়। এরপর মাদ্রাসা ভবনটির নিচে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। মাদ্রাসার সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া ফুটেজে তাকে শুধু একা ছাদে উঠতে দেখা গেছে। কীভাবে সে নিচে পড়েছে তা কেউ বলতে পারেননি।
এ বিষয়ে মাদ্রাসাটির কোনো শিক্ষক কথা বলতে রাজি হননি।
ফেনী সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রহিম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মাদ্রাসাছাত্রের লাশ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ না পাওয়া গেলে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হবে।