ফায়ার ফাইটার সফিউলকে খুঁজে পেতে মায়ের আহাজারি

ফায়ার সার্ভিস কর্মী সফিউল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। মা শাহনাজ বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আজ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার নাগরৌহা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

‘আমার সফিউল কনে গেল। ও সফিউল। তুই কনে গেলি। আমার বুকের ধনরে ছাড়া আমি বাচমু না। তোমরা আমার ব্যাটাক আইন্যা দেও।’ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিখোঁজ তরুণ ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সফিউল ইসলামের মা শাহানাজ বেগমের আহাজারি থামছে না। সান্ত্বনা দিতে আসা প্রতিবেশীরাও ভেঙে পড়ছেন কান্নায়।

আজ সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নের নাগরৌহা গ্রামে সফিউলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এই অবস্থা। নিখোঁজ সফিউলের মা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘প্রতি রাইতেই আমার ব্যাটা ফোন কইরছে। আমগোরে খবর লিছে। শনিবার রাতে শুনি ছেলে নাই...’। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মাটিতে মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।

নিখোঁজ সফিউলের পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আঁখি খাতুন বিছানায় পড়ে কাঁদছিলেন। জানালেন, গত সপ্তাহে চার দিনের ছুটিতে এসেছিলেন তাঁর স্বামী। গত ২৬ মে রাতেই উল্লাপাড়া থেকে কুমিরা চলে যান। এর মধ্যে প্রতিরাতেই তাঁর সঙ্গে সফিউলের কথা হয়েছে। এখন মুঠোফোন বন্ধ পাচ্ছেন।

সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজ সফিউল ইসলাম

দুই বছর ধরে কুমিরা ফায়ার স্টেশনে ফায়ার ফাইটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন সফিউল। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাগরৌহা গ্রামের আবদুল মান্নান ও শাহানাজ বেগম দম্পতির বড় ছেলে। স্থানীয় লোকজন জানান, মাত্র দুই বছর আগে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী হিসেবে যোগদান করেন সফিউল। তিনি এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় কুমিরা ফায়ার স্টেশনের কর্মীদের সঙ্গে সফিউল ইসলামও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৪১। সফিউল এখন পর্যন্ত নিখোঁজ। তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভাগ হয়ে ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সীতাকুণ্ডে অবস্থান করছেন।

সফিউল ইসলামের বাবা আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলের সন্ধানে তিনি বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা সদর দপ্তরে অবস্থান করছেন। সফিউলের ছোট ভাই আল মামুন গেছেন চট্টগ্রামে।

সফিউলের শ্বশুর পাশের বেতকান্দি গ্রামের আকবর হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ের জামাই সফিউল। সে অত্যন্ত ভদ্র ও নরম স্বভাবের মানুষ। আশপাশের এলাকার সবাই তাঁকে খুব পছন্দ করে। মাত্র দুই বছর আগে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে তাঁর নিখোঁজের খবরে আমরা ভেঙে পড়েছি।’