রমজান আলী (৬৫) একজন বর্গাচাষি। বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের কাহর এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে কোমরের ব্যথায় ভুগছেন তিনি। ঢাকা থেকে চিকিৎসক এসে বিনা পয়সায় রোগী দেখবেন জেনে আজ শুক্রবার সকালে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর শহরে আমেনা-বাকী রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ মাঠে এসেছেন। রমজান আলী বলেন, ‘মোর নাতি এই কলেজত পড়াশুনা করে। ওয় কহিল, এইঠে নাকি ঢাকার বড় ডাক্তার আসিবে। টাকা ছাড়াই সাক্ষাৎ পাইল যাবে। এই কথা শুনে এইঠে আসিনু।’
রমজান আলীর মতো অনেকেই আজ বিনা মূল্যের এই মেডিকেল ক্যাম্পে এসেছিলেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এবি ফাউন্ডেশন বিনা মূল্যের এই মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে। দিনব্যাপী মেডিকেল ক্যাম্পে ৭ শতাধিক নারী-পুরুষের সমস্যা শুনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাঁদের ব্যবস্থাপত্র দেন। ‘মানবতার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা’ স্লোগান সামনে রেখে আমেনা-বাকী রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ মাঠে আজকের ক্যাম্প ছিল ফাউন্ডেশনের বিনা মূল্যের মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী কর্মসূচি।
সকাল থেকে দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী থেকে রোগীরা কলেজ মাঠে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠ নারী-পুরুষ রোগীতে গমগম করতে থাকে। কারও কোমর, কারও হাঁটুতে ব্যথা। ক্রাচে ভর করে এসেছেন কেউ, কেউবা হুইলচেয়ারে। নাক-কান-গলার সমস্যা, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা নিয়েও আসেন অনেকেই। নিবন্ধন বুথে নিবন্ধন করে মাঠের মধ্যে প্যান্ডেলে বসে অপেক্ষা করেন। সিরিয়াল অনুযায়ী ডাক পড়ে। ভেতরে ঢুকে চিকিৎসকের কাছে বলেন নিজের সমস্যার কথা। নেন ব্যবস্থাপত্র। সেই সঙ্গে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড থেকে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধও সরবরাহ করা হয়।
দিনব্যাপী মেডিকেল ক্যাম্পে ৭ শতাধিক নারী-পুরুষের সমস্যা শুনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাঁদের ব্যবস্থাপত্র দেন। সেই সঙ্গে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড থেকে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধও সরবরাহ করা হয়।
মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এম আমজাদ হোসেন। অন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন এম খাদেমুল ইসলাম, ফকরুল আমিন খান, এম আর ইসলাম, নুর মোহাম্মদ, মারুফা মোস্তারী, শামীমা আমজাদ, আবু বকর সরকার, খোদেজা খানম ও মো. মনিরুজ্জামান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসকেএফের দিনাজপুর জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক কর্মকর্তা নির্মল কুমার রয় এবং ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক তাহমিদ ইবনে মাজহার।
হুইলচেয়ারে বসে মেডিকেল ক্যাম্পে এসেছিলেন বীরগঞ্জ উপজেলার ষাটোর্ধ্ব জালাল হোসেন (৬৭)। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, চিকিৎসক আমজাদ হোসেনের কাছে এর আগেও চিকিৎসা নিয়েছেন। শীত এলে পায়ের ব্যথা বেড়ে যায় তাঁর। ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। আমজাদ হোসেন এলাকায় এসে রোগী দেখবেন শুনে এখানে এসেছেন। আজকে পরামর্শ নিয়েছেন, কিছু ওষুধও পেয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন গ্রামে গ্রামে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ফাউন্ডেশনের এই কার্যক্রমের সঙ্গে এবি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক তাহমিদ ইবনে মাজহার বলেন, ‘ফাউন্ডেশন থেকে নিয়মিত দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এনে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চিরিরবন্দরের আজকের ক্যাম্প ছিল উদ্বোধনী কর্মসূচি। আমরা স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি বিনা মূল্যে কিছু ওষুধও সরবরাহ করার চেষ্টা করছি।’