রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

ফারহানার বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের একাধিক অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন
ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪ ছাত্রের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল এ তথ্য জানিয়েছেন।

লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, ‘চুল কেটে দেওয়া ছাড়াও শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করা এবং তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের একাধিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তাঁর বিরুদ্ধে শুধু একটি বিভাগের অভিযোগ নয়, সব বিভাগেরই অভিযোগ আছে। জুতার শব্দ হলেও তিনি শিক্ষার্থীদের শাসন করেন বলে অভিযোগ এসেছে। সব অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিষয়গুলো জানা যাবে।’

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার দাপট দেখাতেন। শিক্ষার্থীদের পারিবারিক অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন। চুল কেটে দেওয়ার অপমান সহ্য করতে না পেরে গত সোমবার রাতে বিভাগের ছাত্র নাজমুল হাসান অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

চিকিৎসারত নাজমুল হাসানের ভাষ্য, ‘রোববার চুল কেটে দেওয়ার পর এমনিতেই মানসিকভাবে আমি বিপর্যস্ত ছিলাম। তার মধ্যে সোমবার পরীক্ষার হলে এসে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন আমার খাতায় স্কেল দিয়ে তিনবার আঘাত করে অপমানসূচক কথা বলতে থাকেন। ছাত্রীদের উদ্দেশেও তিনি আপত্তিকর কথা বলতে থাকেন। পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে আমার খাতার ওপর স্কেল দিয়ে আঘাত করেন। এতে খাতার দুই জায়গায় ছিদ্র হয়ে দাগ পড়ে যায়। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করি।’

আবিদ হাসান নামে এক ছাত্র বলেন, ‘ফারহানা ম্যাডামের সিদ্ধান্তগুলো সব সময়ই অমানবিক হয়। শিক্ষার্থীদের তিনি সন্তানের চোখে দেখেন না। আমাদের ওপর কর্তৃত্ব দেখান।’

শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়া প্রসঙ্গে তানভীর হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন পর পরীক্ষা শুরু হলেও শিক্ষক ফারহানা পরীক্ষার তিন-চার দিন আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে রুটিন দিয়েছেন। রুটিনে প্রতিদিনই পরীক্ষা রয়েছে। এটি যৌক্তিক না হওয়ায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ওই শিক্ষক স্মারকলিপি দিতে আসা শিক্ষার্থীদের নাম সংগ্রহ করেন। যাঁরা স্মারকলিপি দিতে চেয়েছিলেন, ঠিক তাঁদেরই চুল কাটা হয়েছে।

সুজন নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের ভাষ্য, ক্লাসের মধ্যে ওই শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রছাত্রীদের আক্রমণ করেন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তিনি নানা রকম কথা বলেন। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সোহাগ ও ফারাহ নাজ নিঝুমের ভাষ্য, ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্মপরিচয় তুলেও গালি দেন। তাঁর কোনো কথার প্রতিবাদ করলে তিনি পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখান।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রিফাত রহমানের দাবি, ‘ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। তবে খারাপ আচরণের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা কখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমাদের নজরে পড়লেও সেটাকে গুরুত্ব দিইনি। আমরা ভেবেছি, হয়তো তিনি শিক্ষার্থীর সঙ্গে আড়ালে ভালো আচরণ করেন।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফারহানা ইয়াসমিন চুল কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, ‘আমার একটু রাগ আছে। পরীক্ষার জন্য, পড়ালেখার জন্য আমি শিক্ষার্থীদের একটু একটু বকাঝকা করি। কিছু ছাত্র আমার কাছে এসে পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বলেছিল। আমি এতে রাজি হইনি। হয়তো সেই রাগে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’