প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সবজি চাষ, সংস্কারেও বাধা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সবজি চাষ করা হচ্ছে। কাঁচাবাড়ি, বদরগঞ্জ, রংপুর
 প্রথম আলো

পুরোনো একটি টিনশেড ঘর। একপাশে ভাঙা টিনের চালা নড়বড়ে খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। একটি কক্ষের সামনে পতাকা স্ট্যান্ড। আর মাঠজুড়ে সবজিখেত। দেখে পরিত্যক্ত স্থানের মতো মনে হলেও বাস্তবে এটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাম কাঁচাবাড়ী ছহিরনের ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ী এলাকায় বিদ্যালয়টি অবস্থিত। সম্প্রতি বিদ্যালয়টির মাঠ দখল করে সবজি চাষ করা হচ্ছে এবং বিদ্যালয়ের সংস্কারকাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালে টিনশেড ঘর তুলে পাঠদান শুরু হয়। পরে ২০১৩ সাল বিদ্যালয়টি সরকারি করা হয়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়টি বন্ধ আছে। এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫৫। বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ৩৩ শতক। জমিদাতা বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক আফরোজা বেগম। তাঁর মা ছহিরন নেছার নামে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, জাতীয়করণের পর থেকে বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে চলছে ষড়যন্ত্র। জমিদাতা বলছেন ‘স্কুলের জায়গায় স্কুল নেই’। তবে প্রকৃত জায়গায় বিদ্যালয়টি আছে। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগে পুরো মাঠ দখলে নিয়ে জমিদাতা এবং বিদ্যালয়ের সভাপতি শিম ও হলুদের চাষ করেছেন। বিদ্যালয় খোলা হলে শিশুদের খেলাধুলা ও অ্যাসেম্বলি করানো বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় থাকবে না।

তাঁরা আমার কাছে তিন লাখ টাকা চান। অন্যথায় বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ করতে দেবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন।
মোশাররফ হোসেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘বছর দেড়েক আগে বিদ্যালয়ে যোগদান করে দেখি করুণ অবস্থা। চেষ্টা তদবির করে একটি দ্বিতল ভবনের বরাদ্দ পেয়েছি। এখনো টেন্ডার হয়নি। আপাতত বিদ্যালয়ের টিনশেড কক্ষ ও টিনের চালা সংস্কারের জন্য সরকারিভাবে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। গত ২৫ আগস্ট সংস্কারকাজ করতে গেলে শ্রমিকদের বাধা দেন বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও সহকারী শিক্ষক আফরোজা বেগম, তাঁর স্বামী বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শফিয়ার রহমান। তাঁরা আমার কাছে তিন লাখ টাকা চান। অন্যথায় বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ করতে দেবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন। গত ৩১ আগস্ট তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দিয়েছি।’

সহকারী শিক্ষক আফরোজা বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নামে তিন দাগে ৩৩ শতক জমি দিয়েছি। মূলত স্কুলের জায়গায় স্কুল নেই। যে জায়গায় স্কুল আছে তা আমার অন্য ভাইবোনের নামে। প্রকৃত জায়গায় স্কুলঘর নির্মাণের কথা বলার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। স্কুলমাঠে সবজির চাষ আমার পরিবারের সদস্যরা করেছে। আমরা প্রধান শিক্ষকের কাছে কোনো টাকা চাইনি।’

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নামে দেওয়া দলিলের ৬ নম্বর পাতায় দৈর্ঘ্য-প্রস্থসহ এক দাগে ৩৩ শতক জমির কথা উল্লেখ আছে। জমিদাতা আফরোজা বেগম দলিলের হলফনামায় লিখিত অঙ্গীকারে বলেছেন “দলিলে কোনো ভুল তথ্য দিয়ে থাকলে পরবর্তীতে নিজ খরচে তা সংশোধন করতে বাধ্য থাকব, নতুবা আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।” এ প্রসঙ্গে আফরোজা বলেন, ‘দলিলটিতে কী লেখা ছিল, তখন তা না পড়েই আমি স্বাক্ষর দিয়েছি।’

আফরোজার মা ছহিরন নেছা (৭০) বলেন, ‘মুইতো অতো কিছু বোঝো না। স্কুলের জাগাত (জায়গায়) স্কুল ঘর হইলে সমস্যা কী? যে জাগাত স্কুল ঘর আছে, সেইটা জাগা স্কুলের নোয়ায়।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শায়লা জেসমিন সাঈদ বলেন, বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শফিয়ার রহমান ও স্কুলশিক্ষক আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সবজি চাষ, স্কুল সংস্কারকাজে বাধা দেওয়াসহ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে তিন লাখ টাকা দাবির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটির প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, অভিযোগটি তদন্তের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।