১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ক্রসফায়ারে সৌদিপ্রবাসী এক যুবককে হত্যার অভিযোগে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার বেলা দুইটার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আলী আকবর পাড়ার বাসিন্দা নুরুল হোছাইন।
মামলায় নুরুল হোছাইন উল্লেখ করেন, ১০ লাখ টাকা চাঁদার জন্য ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ মধ্যরাতে পুলিশ ক্রসফায়ারে হত্যা করে তাঁর ছোট ভাই মাহামুদুর রহমানকে।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের ১৬ জন সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই দীপক বিশ্বাস, এসআই জামসেদ আলম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম এস দোহা, এসআই দীপঙ্কর কর্মকার, এএসআই হিল্লোল বড়ুয়া, এএসআই ফরহাদ হোসেন, এএসআই আমির হোসেন, এএসআই সনজিৎ দত্ত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাগর দেব, ওসি প্রদীপের গাড়িচালক জহির, কনস্টেবল হৃদয়, সৈকত, প্রসেঞ্জিৎ, উদয় এবং হ্নীলা ইউনিয়নের দফাদার নুরুল আমিন, স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল হোছাইন, ভুট্টো, আনোয়ারুল ইসলাম, নুরুল আলম ও নুরুল আমিন। মামলার এজাহারে এসআই দীপক বিশ্বাসকে ১ নম্বর এবং ওসি প্রদীপকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ইনসাফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেলাল উদ্দিন আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মাহামুদুর রহমানের নিহতের ঘটনায় থানায় রুজু করা মামলার এজাহারসহ সব কাগজপত্র আদালতে জমা দিতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে মাহামুদুর রহমান কেনাকাটার জন্য হ্নীলা বাজারে গেলে পুলিশ তাঁকে আটক করে টেকনাফ থানায় নিয়ে যায়। এর আগে ওসি প্রদীপের জন্য ১০ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করেন ইউনিয়নের দফাদার নুরুল আমিন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মাহামুদুর রহমানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ওই দফাদার। ওই দিন ছোট ভাইকে আটকের কারণ জানতে টেকনাফ থানায় গেলে থানার এসআই দীপক বিশ্বাস তাঁকে (নুরুল হোছাইনকে) ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলেন। অন্যথায় ভাইয়ের লাশ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। তাঁর ভাই মাহামুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বললে ক্ষুব্ধ হয়ে এসআই দীপক বিশ্বাস তাঁকে (নুরুল হোছাইনকে) গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেন।
নুরুল হোছাইন সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে জমি বন্ধক রেখে এবং পরিবারে নারীদের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে ২৯ মার্চ ভাইকে মুক্ত করতে তিনি থানায় যান। সেখানে এসআই দীপক বিশ্বাসের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেন। এ সময় ওসি প্রদীপের গাড়ির চালকও উপস্থিত ছিলেন। তখন এসআই দীপক আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। নয়তো পরিণতি খারাপ হবে বলে হুমকি দেন। বাকি পাঁচ লাখ টাকা না পেয়ে অভিযুক্তরা ৩১ মার্চ মধ্যরাতে মাহামুদুর রহমানকে তুলে নিয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভিবাজার এলাকার জাহাঙ্গীরের মাছের ঘেরে ক্রসফায়ারে হত্যা করেন।
মামলার বাদী নুরুল হোছাইন আরও বলেন, দীর্ঘ সময় পর সৌদি আরব থেকে দেশে এসে বিয়ে করেন মাহমুদুর রহমান। সংসারে তাঁর দেড় বছরের এক মেয়েসন্তানও আছে। স্থানীয় কয়েকজনের যোগসাজশে টেকনাফ থানার পুলিশ পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। ন্যায়বিচারের আশায় তিনি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এখন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহত হন। এ ঘটনায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতসহ ১০ পুলিশকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে সবাই চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।