কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম

প্রথমবার ফেরত গেল টিকা, দ্বিতীয় দফায় কাড়াকাড়ি

করোনা সংক্রমণ সামাল দিতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ইসরায়েল
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম। প্রথম দফায় করোনার টিকা গ্রহণকারীর অভাবে বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি ডোজ ফেরত পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দফায় এসে ওই উপজেলায় এখন টিকা নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি।

টিকা না থাকায় দুই দিন (গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার) টিকা দেওয়া বন্ধ ছিল। আজ শনিবার কিছু টিকা এলে মুহূর্তেই তা শেষ হয়ে যায়।

টিকা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হাওরবাসীর চিত্রপটে এমন পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে পরিবর্তনের কিছু কারণও চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে এগিয়ে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা করোনা প্রতিরোধ সামাজিক কমিটির সক্রিয়তাকে। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বিচ্ছিন্ন এই জনপদে বটিকা হিসেবে কাজ করছে।

সাইফুল ইসলাম উপজেলার কাস্তুল ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি ওই ইউনিয়নের সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি। ৭ আগস্ট গণটিকার দিনে এই ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬০০ ডোজ। ওই দিনই টিকা শেষ হয়ে যায়। পরে টিকা না পেয়ে ফেরত যান অন্তত ২৫০ জন।

টিকা নিয়ে সাইফুল ইসলামের কাছে দুই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানা গেল। তিনি বলেন, প্রথম দফায় আদর–যত্ন করেও লোকজনকে টিকা কেন্দ্রে নেওয়া যায়নি। তবে দ্বিতীয় দফার আগে ভালো প্রচারণা হয়েছে। ইমাম সাহেবদের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক। ইউপি সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে টিকার সুফল সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। ফলে টিকা নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজালের অবসান ঘটে। এখন টিকা পেতে লোকজন তদবির করছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জে হাওর উপজেলা তিনটি। অষ্টগ্রাম তিনটির একটি। এই উপজেলায় জনসংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৩। প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ১৫ এপ্রিল। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ১১৫ জন। এই সংখ্যা পাওয়া গেছে ৫৮৭ জনের নমুনা থেকে। আক্রান্তের হার ১৯ দশমিক ৫৯।

জেলায় ৮০ হাজার ২৭১ জনের নমুনা থেকে মোট আক্রান্ত পাওয়া যায় ১০ হাজার ৯২৭ জন। মারা গেছেন ১৯১ জন। আক্রান্তের হার ১৩ দশমিক ৬১। জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে অষ্টগ্রাম একমাত্র উপজেলা, যেখানে এখনো কেউ মারা যাননি। একই সঙ্গে সবচেয়ে কম নমুনা দেওয়া উপজেলা হলো এটি। শুধু তা–ই নয়, প্রথম দফায় আসা ৫ হাজার ডোজের মধ্যে ২ হাজার ৬০০ ডোজ টাকা ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় টিকা আসে ৯ হাজার ৮০০। টিকা পেতে নিবন্ধন করে ১১ হাজার ৩২৪ জন। বুধবার টিকা শেষ হয়ে যায়। ফলে দুই দিন টিকা দেওয়া যায়নি। শনিবার ডোজ আসে ২০০টি। মুহূর্তেই তা শেষ হয়ে যায়। এখন টিকা পেতে আগ্রহী ব্যক্তিরা জনপ্রতিনিধিসহ স্বাস্থ্য বিভাগে ঘুরছেন।

খৈয়রপুর-আবদুল্লাহপুর উপজেলাটির সবচেয়ে দুর্গম ইউনিয়ন। বর্ষাকালে ইউনিয়টি থেকে সদরে আসতে নৌকায় অন্তত দুই ঘণ্টা সময় লাগে। করোনা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা সবচেয়ে বেশি ওই ইউনিয়নেই। তবে এখন ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে ইউনিয়নবাসী। টিকা নিয়েও তাঁদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আগ্রহ।

এই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুক্তার খান বলেন, ‘আমার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য টিকা ছিল ৬০০টি। প্রথম দিনই ফিনিশ। কথা ছিল বৃহস্পতিবার টিকা পাব। এখন শুনছি নেই। কী যে করি। লোকজনের যন্ত্রণায় ঘরে টেকা দায়।’ তাঁর ইউনিয়নে টিকা নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টির পেছনে জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ভালো কাজ দিয়েছে বলে ধারণা মোক্তারের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুরুতে করোনা নিয়ে হাওরবাসী ছিল উদাসীন। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে পদে পদে। কঠোর বিধিনিষেধেও হাওরবাসীকে ঘরে আটকে রাখা যায়নি। মাস্ক পরার ব্যাপারে উদাসীনতা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথম দফায় আসা টিকা কর্মসূচি সফল হওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল স্বাস্থ্য বিভাগের। সেই কারণে সচেতনতা বাড়াতে শুরুতেই হাওরে জারিগানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে সভা করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কিশোরগঞ্জ ইউনিটের ২২ জন চিকিৎসক সচেতনতা বাড়াতে হাওরে চলে যান। সংগঠনের সভাপতি মাহাবুব ইকবালের নেতৃত্বে প্রচারণা চালানো হয়। তারপরও প্রত্যাশিত সুফল আসেনি। ফেরত যায় ২ হাজার ৬০০ ডোজ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ। তিনি উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব। এবার মানুষের মধ্যে টিকায় আগ্রহ দেখে তিনিও খুশি। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে একই মানুষদের ভাবনার এমন পরিবর্তন আশা জাগাচ্ছে। তবে চাহিদার সঙ্গে জোগান দিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। দুই দিন টিকা ছিল না। আজ কিছু টিকা পেলেও তা মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়। তবে তিনি বলেন, পরদিন থেকে টিকা পেতে আর সমস্যা হবে না।