সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন না মেনে একটি টিলার সঙ্গে কয়েকটি গাছও কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংগঠনটি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই অভিযোগ করে।
আজ বিকেলে ‘পরিবেশপ্রেমীদের প্রতিবাদী অবস্থান’ শীর্ষক ব্যানারে ওই অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী। এই সময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল নির্মাণের নামে টিলার ঢাল ও যাতায়াত সুবিধার কথা বলে কয়েকটি গাছ কাটা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগে এ কাজ করা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ। শিক্ষার্থীরা পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষার শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যৎ জীবনে তার প্রয়োগ করবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় যদি পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে, তাহলে বিষয়টি শুধু পরিবেশবাদী নয়, সাধারণ মানুষজনের জন্য দুঃখজনক। করোনাকালের নির্জন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে টিলা কাটা ও গাছ কাটার পেছনে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
ভাষাসৈনিক মতিন উদ্-দীন জাদুঘরের পরিচালক মোস্তফা শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আশরাফুল কবীর, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা) সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইন উদ্দিন, বাপা সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, বিজ্ঞান মঞ্চের সমন্বয়ক প্রণব জ্যোতি পাল, সাংস্কৃতিক সংগঠক বিমান তালুকদার, গণতান্ত্রিক ব্যবসায়ী ফোরাম সিলেটের দপ্তর সম্পাদক আবদুল জব্বার শাহী, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপারের মুজাহিদ হোসেন প্রমুখ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, প্রায় ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল ও শহীদজননী জাহানারা ইমাম হলের মধ্যবর্তী এলাকায় নতুন একটি ছাত্রী হল নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে পাশাপাশি কয়েকটি টিলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি টিলার একদিকে টিনের বেড়া। ভেতরে এক্সকাভেটর দিয়ে টিলার ঢাল কেটে পাশের জমিতে ফেলা হয়েছে মাটি। ওই মাটি দিয়ে ছাত্রী হলের জন্য নির্ধারিত অংশের নিচু জায়গা সমান করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের তদারকিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিএফ করপোরেশন এ কাজ করছে।
অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (২০০০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানার কোনো পাহাড়-টিলা কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। বৃহত্তর স্বার্থে পাহাড়-টিলা কাটতে হলে আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে টিলা বা পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ কাটতে হয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় সূত্র জানিয়েছে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ রকম কোনো ছাড়পত্রের আবেদনও করেনি, কোনো ছাড়পত্রও দেওয়া হয়নি। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরে পরিবেশ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে সরেজমিন পরিদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট অঞ্চলের সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, প্রচলিত পরিবেশ আইন ছাড়াও সিলেট অঞ্চলে টিলা কাটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে একটি নির্দেশনা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিবেশ আইন ও উচ্চ আদালতের আদেশ একই সঙ্গে অমান্য করেছে। টিলা কাটা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে একটি চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, কোনো টিলা কাটা হয়নি। তাঁকে সুনির্দিষ্ট করে দুটি স্থান ও টিলার চূড়ায় স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে বলা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, ঠিকাদার নিচের দিকে কিছু মাটি কেটে সমান করেছে। আমি কোনো টিলা না কাটতে নির্দেশ দিয়েছি।’ গাছ কাটার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য উপাচার্যের মুঠোফোনে আজ বিকেলে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।