প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার, নমুনা সংগ্রহে অবহেলার অভিযোগ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় ৬০ বছরের এক মানসিক প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তবে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ এবং তাঁকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সমাজসেবা কার্যালয় অবহেলা করেছে বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর নমুনা দ্রুত সংগ্রহ করতে না পারলে অনেক সময় অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে পাইকগাছার শ্যামনগর গ্রামের মো. সবুর সরদারকে (৬৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ওই নারীর ভগ্নিপতি বৃহস্পতিবার সকালে সবুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পাইকগাছা থানায় মামলা করেছেন। ধর্ষণের শিকার ওই নারী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন।

মামলার বাদী প্রথম আলোকে জানান, ওই নারী মানসিক প্রতিবন্ধী। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন। থাকার জন্য তাঁকে একটা ঘরও করে দিয়েছে সরকার। বুধবার রাত আটটার দিকে তিনি পাশের গ্রামে ওয়াজ মাহফিলের বয়ান শুনতে যান। রাত একটার দিকে বাড়িতে ফিরে তিনি বারান্দায় খাটে ঘুমিয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে সেখানে গিয়ে সবুর সরদার ওই নারীকে ধর্ষণ করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাইকগাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সবুর সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পৃথকভাবে তাঁর জন্য রিমান্ডের আবেদনও করা হয়েছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়ক অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নারীর রক্তক্ষরণ হয়েছে, ক্ষত হয়েছে। এখন গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন। আমাদের ওসিসিতে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে গাইনি বিভাগে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠলে আমাদের কাছে ভিকটিমকে পাঠাবে।’

তবে ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে হাসপাতাল ও সমাজসেবা কার্যালয় যথাযথভাবে সহায়তা করেননি বলে অভিযোগ করেছেন পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এজাজ শফী। এ বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীকে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর চিকিৎসককে তাঁর ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করার কথা বলা হলেও তা করা হয়নি। অথচ প্রথমে ভিকটিম যে চিকিৎসকের কাছে যাবেন, সেখানেই তাঁর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কথা। এরপর ওই নারীকে জেলা শহরে নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়নি।

ওসি এজাজ শফী বলেন, ‘ হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রতিবন্ধী বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বিষয়টি সমাজসেবা কার্যালয়কে জানানোও হয়েছে। অথচ আমাদের পকেটের টাকা দিয়ে সবকিছু করতে হয়েছে।’
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, একটা ভালো তদন্তের জন্য সবার সহায়তা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতা না থাকলে অপরাধী পার পেয়ে যান। বলার পরও ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ না করলে আসামির শাস্তি কীভাবে হবে। নমুনা নেওয়ার বিধান তো প্রথম বা দ্বিতীয় চিকিৎসকের।

ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর নমুনা সংগ্রহে অবহেলা করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিতীশ চন্দ্র গোলদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দুই দিন খুলনায় ছিলাম। অভিযোগের বিষয়ে জানার পর আমি ওই দিনের কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই নারীকে যখন ভর্তি করা হয়, তখন রক্তক্ষরণ ছিল না, তবে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। সে জন্য সেখানে (চিকিৎসা) ইন্টারফেয়ার করা হয়নি, যদি আবার রক্তক্ষরণ হয়—সেই আশঙ্কায়। আর ধর্ষণের ঘটনার প্রটোকল অনুসারে আমরা তাঁকে খুলনা মেডিকেলের ওসিসিতে রেফার করেছি। আমাদের একটাই অ্যাম্বুলেন্স। ওই নারীকে যখন হাসপাতাল থেকে বের করা হচ্ছিল, তখন অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। এ জন্য বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সেই তাঁকে খুলনায় নেওয়া হয়েছে। আর এখন বলা হলেও ওই সময় নমুনা সংগ্রহের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি বলে জেনেছি।’

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক বিধান চন্দ্র ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীকে গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। রোগীর অবস্থা একটু ভালো হলে তাঁকে ওসিসিতে পাঠানো হবে। তিনি আরও জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে পারে। তবে সেখানে ওই পরীক্ষা হয় না।

আর্থিক সহায়তা না দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজসেবা কর্মকর্তা বেগম পারভীন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে ওই নারীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তখন আমাদের বিষয়টি কেউ জানাননি। আজ শুক্রবার সকালে জানার পর আমরা গাইনি বিভাগে তাঁর খোঁজ নিয়েছি। চিকিৎসেকরা জানিয়েছেন, তাঁর রক্তক্ষরণ এখন বন্ধ হয়েছে। ওই নারীকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’