শেরপুরে প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে ভিক্ষা করা বিধবা শহর বানুকে নিয়ে প্রথম আলোয় খবর প্রকাশের পর তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। শহর বানুকে আর ভিক্ষা করতে হবে না। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে পুনর্বাসনের জন্য তাঁকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। থাকার জন্য বসতঘর ও নাতি আসাদুলের জন্য একটি হুইলচেয়ার দেওয়া হবে। দাদি-নাতিকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনা হবে।
গতকাল সোমবার রাতে প্রথম আলোকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন নকলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান।
শহর বানুর (৫৭) বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে।
গতকাল প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে আর কত দিন ভিক্ষা করবেন বিধবা শহর বানু’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনার কলি মাহবুবের নজরে আসে। পরে ডিসির নির্দেশে গতকাল রাতেই নকলার ইউএনও জাহিদুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাজু সাইদ সিদ্দিকী রামপুর গ্রামে শহর বানুর বাড়িতে যান। তাঁরা বেশ কিছু সময় ওই বাড়িতে অবস্থান করে শহর বানুর সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক খাদ্যসামগ্রী হিসেবে পরিবারটিকে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, লবণ, ইলিশ মাছ ও মুরগি দেওয়া হয়।
ইউএনও জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে পুনর্বাসনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহর বানুকে প্রাথমিকভাবে হাঁস-মুরগি পালন ও ঠোঙা তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্প থেকে তাঁকে একটি বসতঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া শহর বানুকে বিধবা ভাতার কার্ড ও শিশু আসাদুলকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক শিশুটিকে একটি হুইলচেয়ার দেবেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ব্যবস্থা নেওয়ায় শহর বানু খুব খুশি। সরকারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে তিনি আর ভিক্ষা করবেন না।
আজ মঙ্গলবার সকালে শহর বানু প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দুই ছেলে। ছেলেরা দিনমজুর। তাঁদের নিজেদের সংসারই চলে না। একসময় তিনিও দিনমজুরের কাজ করতেন। কিন্তু এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় ও শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় নাতি আসাদুলকে নিয়ে ভিক্ষা করে দিনযাপন করেন। তবে সরকার থেকে তাঁর জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা কার্যকর হলে তিনি আর ভিক্ষা করবেন না।
জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসন সব সময় এই দুস্থ ও অসহায় পরিবারটির পাশে থাকবে। এ ধরনের একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
নকলা উপজেলার রামপুর গ্রামের দিনমজুর মো. রুবেলের ছেলে আসাদুল। তার বয়স সাত বছর। সে শারীরিক, বাক্ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। আসাদুলের বয়স যখন চার বছর, তখন তার মা রাশেদা বেগম ঢাকার এক বাসায় ছেলেকে রেখে চলে যান। তিনি আর ছেলের খোঁজ করেননি। পরবর্তী সময়ে আসাদুলকে তার দাদি শহর বানুর কাছে রেখে যান বাবা রুবেল। তখন থেকে শহর বানু প্রতিবন্ধী আসাদুলকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করে দুজনের খাবারের ব্যবস্থা করেন। আর থাকেন একটি জরাজীর্ণ ঘরে।