প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে আর কত দিন ভিক্ষা করবেন বিধবা শহর বানু

এই জরাজীর্ণ ঘরে প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে থাকেন শহর বানু। ভিক্ষা করে জীবন যাপন করেন।
ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়

মা–বাবার কাছে আশ্রয় মেলেনি প্রতিবন্ধী শিশুটির। দরিদ্র বিধবা দাদিই এখন তাঁর একমাত্র সহায়। তবে যে উপায়ে দাদি তাকে বাঁচিয়ে রাখছেন, সে উপায়টি মোটেও সম্মানজনক নয়। দাদি ভিক্ষা করে দুজনের খাবারের ব্যবস্থা করেন। তিন বছর ধরে এভাবেই দিন চলছে দাদি–নাতির। এখন দাদির ওপরও ক্লান্তি এসে ভর করেছে। আর কত দিন এভাবে ভিক্ষা করে দিন কাটাবেন তিনি?
 
প্রতিবন্ধী শিশুটির নাম মো. আসাদুল। তার বয়স সাত বছর। সে শারীরিক, বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। আসাদুল শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের দিনমজুর মো. রুবেলের ছেলে। আসাদুলের বয়স যখন চার বছর, তখন তার মা রাশেদা বেগম ঢাকার এক বাসায় ছেলেকে রেখে চলে যান। তিনি আর ছেলের খোঁজ করেননি।


পরে আসাদুলের চাচি নুরেছা বেগমের সহযোগিতায় বাবা রুবেল ছেলেকে ঢাকা থেকে নকলার রামপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। রুবেল ছেলেকে মা শহর বানুর (৫৭) কাছে রেখে যান। সেই থেকে আসাদুল দাদি শহর বানুর কাছে থাকে। নাতি ও নিজের জীবনযাপনের জন্য তাঁকে নির্ভর করতে হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির ওপর।

শহর বানুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসাদুলের বাবা ঢাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। স্ত্রী রাশেদার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। দাদি শহর বানুই এখন আসাদুলের একমাত্র আশ্রয়স্থল। শহর বানু রামপুর এলাকায় তাঁর বাবার সামান্য জমিতে তৈরি একটি জরাজীর্ণ ঘরে নাতি আসাদুলকে নিয়ে থাকেন।


শহর বানু নিজেও অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে কোমরের ব্যথায় ভুগছেন। তারপরও প্রতিবন্ধী নাতিকে কোলে নিয়ে সারা দিন ভিক্ষা করেন। সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে রান্না করে নিজে খান, নাতিকে খাওয়ান। বললেন, ‘এভাবে জীবন যেন আর চলে না।’

শহর বানু বলেন, ‘জন্ম থাইক্যাই নাতি আসাদুলের শরীরে সমস্যা। দাঁড়াইতে ও কথা বলতে পারে না। একা চলবার পায় না। সাত বছর বয়স হইলেও বুদ্ধি নাই। নাতিরে নিয়া ভিক্ষা কইরা যা পাই, তাই দিয়াই জীবন চালাই। নিজের শরীর ভালো না। তাই নাতিরে কোলে নিয়া ভিক্ষা করতে খুব কষ্ট হয়। সরকার থাইক্যা আমার আর নাতির নামে দুইটা কার্ড (বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা) কইরা দিলে, নাতির জন্য একটা হুইলচেয়ার দিলে অনেক উপকার হইত।’


দাদি শহর বানু জানান, রান্না ও গোসলসহ অন্যান্য কাজের সময় প্রতিবন্ধী শিশুটিকে ছোট একটি গর্তে রেখে যান তিনি। কারণ আসাদুল একা বসে থাকতে পারে না। বিছানায় শোবার সময়ও তাকে ধরে রাখতে হয়। তা না হলে বিছানা থেকে সে পড়ে যায়।

ঘরের ভেতর গর্তে প্রতিবন্ধী নাতিকে রেখে দাদি শহর বানু রান্নাবান্নাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করেন।

এ ব্যাপারে চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজু সাইদ সিদ্দিকী বলেন, শহর বানুর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। শিশুটির জন্ম নিবন্ধনের জন্য তার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) চেয়েছেন। শহর বানুর এনআইডিও চেয়েছেন তাঁর কাছে। এসব কাগজপত্র পেলে তাঁদের সরকারের নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।


অপর দিকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তাঁদের নাম তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। আবেদন পেলে ওই বিধবা নারী ও প্রতিবন্ধী শিশুটির জন্য বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়ার জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।