কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পৌনে দুই লাখ শরণার্থী পরিবারের জন্য কেনা হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোরবানির পশু। আগামীকাল রোববার সকালে পশুগুলো জবাই করে গোস্ত শরণার্থীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে। তা ছাড়া কয়েক শ রোহিঙ্গা পরিবার উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন বাজার থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ৩০০ গরু-মহিষ কিনেছে কোরবানির জন্য।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিবারে কোরবানির পশুর গোস্ত পৌঁছে দিচ্ছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়।
এই কাযালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা প্রথম আলোকে বলেন, পৌনে দুই লাখ রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য প্রায় তিন হাজার কোরবানির পশু কেনা হয়েছে। আশ্রয়শিবিরে থাকা শরণার্থীদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন এনজিও পশুগুলো কিনে দিচ্ছে। আরআরআরসি কার্যালয় ক্যাম্প পরিচালনার মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) মাধ্যমে পশুগুলো জবাই করে ঘরে ঘরে গোস্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। প্রতি পরিবার মাংস পাবে এক থেকে দেড় কেজি। তিন হাজার পশুর মধ্যে ২ হাজার ২০০টি গরু-মহিষ এবং ৭০০টি ছাগল।
বিদেশ থেকে আত্মীয়স্বজনের পাঠানো টাকায় কিছু রোহিঙ্গা পৃথকভাবে নিজ উদ্যোগে পশু কিনে কোরবানি করছেন জানিয়ে সামছু-দ্দৌজা বলেন, তাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগে রোহিঙ্গা কতটি পশু কোরবানি দিচ্ছে, তার তথ্য আরআরআরসি কার্যালয়ে নেই।
আরআরআরসি কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বছর করোনা মহামারি এবং লকডাউন চলাকালীনও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তিন হাজারের বেশি গরু-মহিষ এবং দেড় হাজার ছাগল জবাই হয়েছিল। এনজিওগুলোর বরাদ্দ না থাকায় এবার কোরবানির পশুর সংখ্যাও কমে এসেছে। এ কারণে মাংসের ওজনও কমে গেছে। গত বছর প্রতি রোহিঙ্গা পরিবার আড়াই কেজি করে মাংস পেয়েছিল।
শাহপরীর দ্বীপ করিডর দিয়ে মিয়ানমারের পশু আমদানি বন্ধ থাকায় এবার টেকনাফ ও উখিয়ার বাজারে কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে অনেক। গত বছর আগে তিন মণ ওজনের একটি গরু ৫০-৬০ হাজার টাকায় কেনা হলেও এবার সে গরু কিনতে হয়েছে লাখ টাকার বেশি দামে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য শতাধিক গরু কিনেছে একটি এনজিও। ওই সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, শাহপরীর দ্বীপ করিডর দিয়ে মিয়ানমারের পশু আমদানি বন্ধ থাকায় এবার টেকনাফ ও উখিয়ার বাজারে কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে অনেক। গত বছর আগে তিন মণ ওজনের একটি গরু ৫০-৬০ হাজার টাকায় কেনা হলেও এবার সে গরু কিনতে হয়েছে লাখ টাকার বেশি দামে। আজ শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত ১৪টির বেশি এনজিও দেড় হাজারের মতো গরু-মহিষ কিনে আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়।
সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য ২ হাজার ২০০ গরু-মহিষ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা । তাঁদের দাবি, ২০২০ সালে ১১ লাখ রোহিঙ্গার জন্য পশু বিতরণ হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি। এবার গরু-মহিষ-ছাগল মিলে তিন হাজার পশু বিতরণ হচ্ছে, তাতে এক কেজির বেশি মাংস পাবেনা কোনো পরিবার। এতে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার মাংস প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে।
উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে শরণার্থী রয়েছেন প্রায় ৭৮ হাজার। গরু-মহিষ বরাদ্দ পাচ্ছে ৩৬টির মতো।
আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা রহিম উল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সরবরাহ করা গরুগুলো ছোট, ওজনে দুই থেকে তিন মণ। তাতে সব রোহিঙ্গা পরিবারে মাংস পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের মাঝি জালাল আহমদ বলেন, গত বছর এই ক্যাম্পে ৭২টি গরু-মহিষ জবাই হয়েছিল। এবার মাত্র ৩০টি। তবে ধনাঢ্য বহু রোহিঙ্গা পরিবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে উখিয়ার বাজার থেকে গরু-মহিষ কিনে কোরবানি দিচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের অনেক স্বজন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। তাঁরা কোরবানির জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন, সেই টাকায় রোহিঙ্গারা পশু কিনে কোরবানি দিচ্ছেন।
কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে রোহিঙ্গারা প্রায় ৩০০ গরু-মহিষ কিনেছেন। ঈদুল আজহার নামাজ শেষে পশুগুলো জবাই হবে।