যে ঝুমন দাসের (২৮) ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা–লুটপাট; তিনি বিএনপির সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ সুপারের (এসপি) সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেওয়া হবে বলে এসপি আশ্বস্ত করেছেন।
শাল্লায় হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে এসপি মো. মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে দুপুরে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে শাল্লার ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন এসপি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের শুরুর দিকে এসপি বলেন, নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি শাল্লা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ঝুমনকে আটকের পর ১৭ মার্চ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এসপি মো. মিজানুর রহমান বলেন, নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেওয়া হবে। পুলিশ নানা বিষয় মাথায় রেখে ঘটনার তদন্ত করছে। তবে ঘটনার সূত্রপাত যেহেতু হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে, তাই সেখান থেকে তদন্তের শুরু। এর সঙ্গে আরও নানা বিষয় যুক্ত হতে পারে। যাঁরাই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো নিরপরাধ লোককে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ঝুমন দাসের ফেসুবক পোস্টের জেরেই দিরাই ও শাল্লার কয়েকটি গ্রামের কয়েক শ মুসলিম মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে জড়ো হন। তাঁরা মিছিল করে, স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান। এই খবর পেয়ে শাল্লা থানার পুলিশ সেখানে যায় এবং ঝুমন দাসকে আটক করে। দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়ে ফিরে যায়। পরে নোয়াগাঁও গ্রামের পাশের ধারাইন বাজারে একজন উপপরিদর্শক, একজন সহকারী উপপরিদর্শকসহ ৯ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
১৭ মার্চ সকালে নোয়াগাঁওয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দিনের ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে এসপি বলেন, নোয়াগাঁও গ্রামটি ধারাইন নদীর দক্ষিণ পাড়ে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি। উত্তেজিত লোকজন যাঁরা পশ্চিম দিক থেকে ওই গ্রামে গিয়েছিলেন, পুলিশ তাঁদের শান্ত করে। এখানেই বড় জমায়েত ছিল। পুলিশ যখন পশ্চিম দিক সামলাতে ব্যস্ত, তখন পূর্ব দিক থেকে অল্প কয়েকজন ঢুকে গ্রামে হামলাটি চালায়। ঘটনার পর গ্রামের স্কুলে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে। যত দিন দরকার, তত দিন সেখানে ক্যাম্প থাকবে।
পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাঁকে হামলার মূল ইন্ধনদাতা বলা হচ্ছে, সেই শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীনও (৫০) গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কে কোন দলের, কার কোন পদ আছে বা ছিল; সেটা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো তিনি অপরাধ করেছেন কি না। আমরা সেটিই দেখব। কোনো অপরাধী পার পাবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সহিদুর রহমান, পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঝুমন দাসের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে শাল্লা উপজেলা ছাত্রদলের বর্তমান আহ্বায়ক তারেক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঝুমন একসময় ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে তিনি অনুমোদিত কোনো কমিটির পদে ছিলেন না। দুই বছর আগে তিনি নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তিনি এখন বিএনপি বা ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত নন।