রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন ছাত্রী তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁদের পোশাক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য ও মানসিক হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীদের ভাষ্য, হেনস্তাকারী তিনজনের মধ্যে একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্ত্রী ও আরেকজন প্রহরী। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটের পাশে এ ঘটনা ঘটে বলে ছাত্রীরা দাবি করেছেন।
ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের একটি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। দুই ছাত্রীর একজন বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামে একটি গ্রুপে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে চারটায় এক বান্ধবীর সঙ্গে কাজলা গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকি। বান্ধবীর ব্যাকপেইনের কারণে সে মসজিদের সামনে দাঁড়ালে হঠাৎ একজন (সম্ভবত শিক্ষক হবেন) চিৎকার দিয়ে বললেন যে “এই মেয়ে এখান থেকে যাও। লজ্জাশরম নেই? মসজিদের সামনে দাঁড়িয়েছ কেন?” আমরা সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তৎক্ষণাৎ যে প্রহরী ছিলেন, তিনি গালাগালি শুরু করে দিয়েছেন। “আপনাদের ড্রেসআপের ঠিক নেই। নির্লজ্জ। আপনাদের ওড়না ঠিক নেই। বেয়াদব মেয়েমানুষ।” আরও অনেক কিছু বলা শুরু করেন। আমি উনাকে প্রশ্ন করি, “আমরা চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনি ড্রেসআপ নিয়ে কথা বলছেন কেন?”’
পোস্টে এই ছাত্রী আরও লেখেন, ‘এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এক নারী এসে বলেন, “বেয়াদব মেয়ে এখনো ওড়না দিয়ে শরীর ঢাকোনি আর তর্ক করছ?” সেই শিক্ষক হুকুম দিলেন, আমাদের আইডি কার্ড রেখে দেওয়ার জন্য। আমরা হাঁটছিলাম, তখন উনি আমাদের ধরে আনতে ও আইডি কার্ড রেখে দিতে বলেন। এতে সেই প্রহরী সুযোগ পেয়ে আরও কিছু কথা শুনিয়ে বললেন, “আপনাদের স্যার বলছেন আইডি কার্ড দেন। নাহলে এখনই ক্যাম্পাস থেকে বের হন।” এরপর আমরা মানসম্মানের ভয়ে নিজেরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে এলাম।’
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ওই ছাত্রী বলেন, ‘ঘটনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ আমরা দুজন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা ওই শিক্ষকের বিভাগ ও নাম জানতে পেরেছি। এ ছাড়া ওই নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের স্ত্রী ছিলেন বলেও জেনেছি।’ তিনি বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল। আমরা আগামীকাল (রোববার) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তর ও যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে লিখিত অভিযোগ করব।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী কাজলা গেটে গিয়েছিল। তখন শুনতে পেয়ে আমিও গিয়ে ঘটনাটি শুনেছি। যাহোক, শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিক, তারপর বিষয়টি দেখব।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ফোরামের (আরইউডিএফ) সদস্য। আজ শনিবার সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সদস্য মো. ইব্রাহিক খলিল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও বিচারের দাবি জানানো হয়।