কোলের শিশুকে বুকে জড়িয়ে ঘরের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা। জানালা দিয়ে সেখানেই পেট্রল ছুড়ে আগুন দিয়ে দুজনকে পুড়িয়ে মারল দুর্বৃত্তরা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফারাসপুর গ্রামে গত সোমবার গভীর রাতে ঘটেছে এ ঘটনা।
নিহত মা তাছলিমা খাতুনের বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর। তাঁর শিশুকন্যা নিহত তাছমিয়া আক্তারের বয়স মাত্র ১৮ মাস। পরিবারের অভিযোগ, তাছলিমার বড় মেয়ে ঊর্মি খাতুনের স্বামী কামাল হোসেন এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন। কারণ জামাই-মেয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুবই খারাপ যাচ্ছিল। এমনকি সম্প্রতি কামাল গ্রামে এসে পরিবারটিকে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকিও দিয়ে যান।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বড় মেয়ে ঊর্মি খাতুন (১৯) ও ছোট মেয়ে তাছমিয়াকে নিয়ে একই ঘরের খাটের ওপর ঘুমান তাছলিমা খাতুন। রাত দুইটার দিকে জানালা দিয়ে ওই ঘরের ভেতরে পেট্রল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মুহূর্তের মধ্যে তাছলিমা ও তাছমিয়ার শরীরে আগুন ধরে যায়। সামান্য দগ্ধ হন ঊর্মি। তাঁদের আর্তচিৎকারে ঘুম ভাঙে অন্যদের। সবার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নেভান। তাছলিমা ও তাছমিয়াকে দ্রুত কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভোররাতেই যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় দুজনকে। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে সঙ্গে সঙ্গে দুজনকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন পরিবারের সদস্যরা। সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পর মা-মেয়ের মৃত্যু হয়।
তাছলিমার স্বামী নজরুল ইসলামের ভাই সোহেল উদ্দিন বলেন, পরিবারের বড় মেয়ে ঊর্মি খাতুনের সঙ্গে চার বছর আগে বিয়ে হয় যশোর সদর উপজেলার আগ্রাইল গ্রামের কামাল হোসেনের। পেশায় লেদমিস্ত্রি কামাল স্ত্রী ঊর্মিকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। কিন্তু নানা কারণে মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। গত ঈদুল আজহার আগে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। খবর পেয়ে নজরুল ইসলাম ঢাকায় গিয়ে মেয়ে ঊর্মিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ঈদের সময় জামাইকে বাড়িতে দাওয়াতও দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি না এসে ঊর্মিকে যশোরে পাঠিয়ে দিতে বলেন। রাজি না হওয়ায় ঊর্মিকে সেখানে পাঠানো হয়নি। সর্বশেষ দুদিন আগে গত শনিবার কামাল হোসেন ফারাসপুরে আসেন। কিন্তু ঊর্মিদের বাড়িতে না গিয়ে তিনি পাশের লোকজনের মাধ্যমে হুমকিধমকি দিয়ে যান।
স্থানীয় নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাজেদুল হক বলেন, দুর্বৃত্তরা যেভাবে মা-মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছে, তা খুবই দুঃখজনক। শিশুটির শরীরের পোড়া স্থান দেখে কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। পরিবারের অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের আটক করার দাবি জানান তিনি।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিমও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিবারের লোকজনের সন্দেহের ভিত্তিতে তাঁরা তদন্ত শুরু করেছেন। তিনি জানান, নিহত তাছলিমার স্বামী নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে রাতে থানায় মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের আসামি করা হয়েছে। তবে সন্দেহের তালিকায় জামাই কামালের নাম রাখা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে নিহত তাছলিমা ও তাছমিয়ার লাশ গতকাল রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতেই নিজ গ্রামে দাফন হওয়ার কথা।