বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জিন্নাতুল ইসলাম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জিন্নাতুল ইসলাম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান

‘পেটের সন্তান বাবাকে দেখার আগেই তাঁকে হারাল’

চলতি মাসের শেষের দিকে সন্তানের জন্ম হবে, সেই অপেক্ষায় ছিলেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ভূঁইয়াপাড়া গ্রামের জিন্নাতুল ইসলাম ও রিনা আক্তার দম্পতি। তবে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জিন্নাতুল। অন্তঃসত্ত্বা রিনা এখন অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়।  

জিন্নাতুল দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। গত ৫ আগস্ট দুপুরে গাজীপুরের বাসন থানার সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিলে জিন্নাতুলের পেট ও ঊরুতে দুটি গুলি লাগে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জিন্নাতুল গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। অভাবের কারণে আর পড়াশোনা সম্ভব হয়নি। সংসারের অভাব ঘুচাতে ১০ বছর আগে জিন্নাতুলের পুরো পরিবার কাজের জন্য গাজীপুর চলে আসে। সেখানে তাঁর বাবা মোস্তফাসহ সবাই পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন।

বছরখানেক আগে বাবা মারা যান। আর জিন্নাতুল যে কারখানায় কাজ করতেন, সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বালু পরিবহনের গাড়িতে শ্রমিকের কাজ নেন। আর তাঁর বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম জয়দেবপুরে একটি কারখানায় কাজ নেন। দুই ভাইয়ের আয় দিয়েই চলছিল পরিবারটি। এক বছর আগে জিন্নাতুল ময়মনসিংহের গৌরীপুর এলাকার রিনা আক্তারকে বিয়ে করেন।

স্বামীকে হারিয়ে রিনা পাগলপ্রায়। তিনি বলেন, ‘আমার তো আর কিছুই রইল না। পেটের সন্তান বাবাকে দেখার আগেই তাঁকে হারাল। সেও (জিন্নাতুল) তো তাঁর সন্তানকে দেখে যেতে পারল না। অভাবের সংসার। এখন আমরা কীভাবে চলব? কিছু্ই বুঝতে পারতাছি না।’

জিন্নাতুলের মা চম্পা আক্তার বলেন, ‘জিন্নাতুল বালুর গাড়িতে শ্রমিকের কাজ করত। জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে আমার ছেলে ছাত্রদের লগে আন্দোলনে যাইত। তারে নিষেধ করলেও কোনো কথা শুনত না। ছেলে হারানোর বিচার কার কাছে চাইব? আমরা গরিব মানুষ। একদিন কাজ না করলে তিন বেলা খাইতে পারি না। বিপদ যে কিবায় কাটবো তা ভাইববা কূল–কিনারা পাইতাছি না।’

জিন্নাতুলের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট দুপুরবেলা বাসন থানার সামনে ভাই গুলিবিদ্ধ হয়। পরে সন্ধ্যার সময় একজন ফোন করে জানায়, ভাই গুলিবিদ্ধ হইছে। হাসপাতালে গিয়া তার মরদেহ পাই। বড় ভাই হইয়া ছোট ভাইয়ের লাশ দেখা কতটা কষ্টের, তা বোঝানো যাবে না ভাই। আমার ভাইয়ের সন্তানটা বাবার মুখ দেখতে পারত না, এর চেয়ে কষ্টের কিছু আছে?’

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে জিন্নাতুলের পরিবারকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এই পরিবারের পাশে থাকতে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।