বিরোধটা পারিবারিক। এর জেরে বাগান থেকে লিচু পাড়তে ‘মানা করেছে’ পুলিশ। এতে ১৫টি গাছের পাকা লিচু পচে নষ্ট হচ্ছে। দুই লাখ টাকার মতো ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাগানমালিক। এ ঘটনা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার।
বাগানমালিকের নাম শামসুল হক প্রামাণিক (৫৫)। তিনি উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় লোকজন ও বাগানমালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শামসুল হকের তিন ভাই ও চার বোন। শামসুল হক নিঃসন্তান। ২০০০ সালে তাঁদের বাবা মহিউদ্দিন প্রামাণিক মারা যান। এ সময় পৈতৃক জমিজমা ভাইবোনের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। শামসুল হক বাবার জমি থেকে লিচুবাগানসহ ৫৯ শতক জমি পান। এর মধ্যে ২২ শতক জমি পরবর্তী সময়ে বিক্রি করে দেন। বাকি জমিতে নতুন করে কিছু লিচুগাছ রোপণ করেন। সেখানে বাগানের পাশাপাশি ঘর তৈরি করে বসবাস করতে থাকেন তিনি। ২০ বছর ধরে তিনি বাগানটি ভোগ–দখল করে আসছেন।
শামসুল হকের ভাষ্য, তিনি নিঃসন্তান হওয়ায় ২০২০ সাল থেকে তাঁর ভাগনে, ভাই ও ভাতিজারা জমিটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাঁকে মারপিট করেন ভাগনে মো. হিমু (২৪), ভাতিজা শিশুর ইসলাম (২৩) এবং ভাই এনামুল হক (৬০) ও আসাদুল হক (৫৮)। তখন পকেটে থাকা ৩০ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেন তাঁরা।
শামসুল হকের অভিযোগ, পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাঁকে বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করতে মানা করেছে। এতে তাঁর বাগানের পাকা লিচু পচে নষ্ট হচ্ছে।
এ ঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা করেন শামসুল হক। পরবর্তী সময়ে আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসেন। এরপর তাঁকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। হুমকিদাতারা তাঁর লিচুবাগানটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় শামসুল গত ২৫ মে ঈশ্বরদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
শামসুল হকের অভিযোগ, পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাঁকে বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করতে মানা করেছে। এতে তাঁর বাগানের পাকা লিচু পচে নষ্ট হচ্ছে। লিচু নষ্ট হয়ে গেলে তিনি প্রায় দুই লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
শামসুল হকের জিডির পর তাঁর ভাই-ভাতিজারা থানায় পাল্টা এজাহার দেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ফলে দুই পক্ষকেই লিচুবাগানে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।মো. আসাদুজ্জামান, ওসি, ঈশ্বরদী থানা, পাবনা
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শামসুল হকের জিডির পর তাঁর ভাই-ভাতিজারা থানায় পাল্টা এজাহার দেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ফলে পুলিশের পক্ষ থেকে দুই পক্ষকেই লিচুবাগানে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সমস্যা সমাধানে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে ওসি বলেন, সমঝোতা না হলে দুয়েক দিনের মধ্যেই চেয়ারম্যানের জিম্মায় লিচু বিক্রি করে টাকা সংরক্ষণ করা হবে। পারিবারিক বিরোধ মিটলে জমির মালিক টাকা পেয়ে যাবেন।