কালকিনিতে ইউপি নির্বাচন

পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা, মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

‘নৌকা, নৌকা’ স্লোগান দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নেয়ামুল আকনের ওপর হামলা চালানো হয়। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে এক প্রার্থী হামলার শিকার হয়েছেন। পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থী নেয়ামুল আকনের। আক্রমণের শিকার হয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তাও।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই ইউপির নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে দায়িত্বপালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ও এনায়েতনগর ইউপিতে আগামী ১৫ জুন ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, পূর্ব এনায়েতনগর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নেয়ামুল আকন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তাবকারী, সর্মথনকারীসহ কয়েকজনকে নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের দিকে যান। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে নেয়ামুল আকন ও তাঁর স্ত্রী ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান রেহেনা পারভীনের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের বাধা দিতে গেলে নেয়ামুলের আরও দুই সমর্থক আহত হন। হামলার সময় তাঁরা নেয়ামুলের মনোনয়নপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন। পরে উপজেলা চত্বরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ব্যাপারে কালকিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং কর্মকর্তা দীপক বিশ্বাস বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতিতেই প্রার্থী ও আমার ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী নেয়ামুল আকনের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহাবুব আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চান। তাই তিনি তাঁর সমর্থক ও লোকজনকে দিয়ে এ হামলা চালিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (মাহাবুব) আমাকে আগে থেকেই হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি আমি পুলিশ, ইউএনওকে জানাই। আমি যখন মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাই, তখন পুলিশের চোখের সামনে মাহাবুবের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে। আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে ইউএনও ধাক্কা খেয়েছেন। পুলিশ কিছুই করল না। আমার মনোনয়ন ছিনিয়ে নিল, আমাকে অনেক মারধর করেছে। আমার স্ত্রীর ওপর হামলা করেছে। আমি নির্বাচনে দাঁড়াতে চাই এবং এ ঘটনার বিচার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে মাহাবুব আলম বলেন, ‘আমি সকালে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি এবং আমার লোকজন নিয়ে এলাকায় চলে আসি। এ হামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার কোনো লোকজন এ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়।’

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেওয়ার ঘটনার পর পূর্ব এনায়েতনগর ইউপির নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এর ফলে আপাতত নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। পরবর্তীকালে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হবে।

জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতিতে প্রার্থীর ওপর হামলার বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি জেনে জানাতে পারব। তবে এক প্রার্থীকে মনোনয়ন দাখিলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিছু লোকজন। তখন আমাদের পুলিশ প্রার্থীকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দেয়। তখন প্রার্থী জানান, তাঁর মনোনয়নপত্র হারিয়ে গেছে। তবে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি, প্রার্থীকে টানাটানি, ধাওয়া—এটা ভিন্ন জিনিস। এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, তদন্ত করা হচ্ছে।’