পিরোজপুরে এহসান গ্রুপের আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন গ্রাহকেরা। আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী শহরের সিও অফিস এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ মানববন্ধনে কয়েক হাজার গ্রাহক অংশ নেন।
মানববন্ধন চলাকালে গ্রাহকদের মধ্যে পিরোজপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর চুঙ্গাপাশা সিনিয়র মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মো. এখলাছুর রহমান, হাফেজ নাসির উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ, আইনজীবী নূরুল ইসলাম, আক্তারুজ্জামান, বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাসিন্দা নার্গিস বেগম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, এহসান গ্রুপে টাকা জমা রেখে হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। প্রতারক ও অর্থ আত্মসাৎকারী রাগীব আহসানকে গ্রাহকের জমা করা টাকা ফেরত দিতে হবে বলে জানান বক্তারা।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকা থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে রাগীব আহসান ও তাঁর ভাই আবুল বাশার খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। রাগীব হাসানের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। এদিকে ওই দিনই পিরোজপুর থানার পুলিশ রাগীব আহসানের দুই ভাই মাহমুদুল হাসান ও খাইরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। ওই দিন রাতেই পিরোজপুর সদর উপজেলার মূলগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে রাগীব আহসান ও তাঁর চার ভাইকে আসামি করে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় থানায় মামলা করেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকা থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে রাগীব আহসান ও তাঁর ভাই আবুল বাশার খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ জেড এম মাসুদুজ্জামান বলেন, আজ দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাগীব হাসান ও তাঁর ভাইকে থানায় সোপর্দ করেনি র্যাব।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০৮ সালে পিরোজপুরে এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স প্রতিষ্ঠা করেন রাগীব আহসান। পরে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেওয়া হয় এহসান গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, এহসান সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড, ডেফোডিল মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, এহসান বেসিক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড ও এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড নামের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে অধিক মুনাফা দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয় আমানত নিয়ে ব্যবসা শুরু করে।
গ্রাহকের টাকায় এই গ্রুপ ১৭টি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিল। এগুলো হলো এহসান এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, নুর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নুরজাহান মহিলা মাদ্রাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার ও এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম। ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, শরিয়াহসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগের কথা বলে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা হয় এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ সংগ্রহ করে রাগীব আহসান তাঁর পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নামে-বেনামে সম্পত্তি ও জায়গাজমি করেছেন।
কয়েকজন গ্রাহক বলেন, প্রতিষ্ঠানটি প্রতি ১ লাখ টাকা আমানতের বিপরীতে মাসে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে পিরোজপুর ও পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠি, বাগেরহাট জেলার ১০ হাজার ব্যক্তির কাছ থেকে শতকোটি টাকা সংগ্রহ করে। আড়াই বছর আগে ব্যবসায়িক অংশীদার হুমায়ুন কবিরের দেওয়া চেক ডিজঅনার মামলায় রাগীব আহসান গ্রেপ্তার হন। কারাগারে যাওয়ার খবরে সদস্যদের মধ্যে আমানত খোয়ানোর আশঙ্কা দেখা দিলে গ্রাহকেরা তাঁদের টাকা ফেরত নিতে শুরু করেন। এর কিছুদিন পর ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে গ্রাহকদের মাসিক মুনাফা ও আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর পর থেকে গ্রাহকেরা প্রায়ই প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে জামানতের টাকা ফেরত পেতে ভিড় করতেন।