সাধারণত শীত এলেই সামনে আসে পিঠাপুলির কথা। সকাল সকাল গাছ থেকে খেজুরের রস নামিয়ে পিঠা বানানোর তোড়জোড়। ভাপ ওঠা চুলার চারদিকে শিশু-কিশোরদের অপেক্ষা—কখন নামবে পিঠার হাঁড়ি, কে কত পিঠা খাবে তার প্রতিযোগিতা।
গ্রামবাংলার চিরাচরিত ওই রীতি এখন আর হয়তো খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে শীতের এই অনুষঙ্গ থেমে নেই মোটেও। শীতের শুরুতেই শহর বা গ্রামের অলিগলিতে জমে ওঠে মৌসুমি পিঠার দোকান। সেখানে মেলে হরেক পদের পিঠা। এই পিঠা কারও বাড়তি আয়ের উৎস, কারওবা জীবিকার প্রধান মাধ্যম।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ-কাপাসিয়া সড়কের কলেজ গেট মোড়ে এমনই একটি পিঠার দোকান ষাটোর্ধ্ব নূরজাহান বেগমের। মাটির চুলা। চুলার কয়েকটি জ্বালামুখ। তাতে তৈরি হচ্ছে চিতই, ভাপাসহ নানা পিঠা। এর পাশেই ছোট ছোট বাটিতে থরে থরে সাজানো শর্ষে, মরিচ, চেপা শুঁটকিসহ নানা স্বাদের ভর্তা। সেখানে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ খাচ্ছেন, কেউবা কাগজের ঠোঙায় মুড়িয়ে পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
গত শনিবার রাত আটটার দিকে কথা হয় নূরজাহানের সঙ্গে। তিনি তখন পিঠা বিক্রিতে ব্যস্ত। কথায় কথায় জানা গেল, নূরজাহানের স্বামী অসুস্থ। সন্তানেরা থেকেও না থাকার মতো। তাই তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। শীতের এই সময়ে পিঠা বিক্রি করেন। বাকি সময় কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। তাতে কোনোরকম দিন চলে যায় তাঁর।
নূরজাহান বলেন, ‘ঘরে না খেয়ে থাকলেও দেখার কেউ নাই। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় দোকান নিয়ে বসেছি। এ ছাড়া শীতের এই সময়ে পিঠার প্রচুর চাহিদা। তাই পিঠা বিক্রি করেই পেট চলে।’
এ ছাড়া শুক্র ও শনিবার গাজীপুরের নগরের জয়দেবপুর, জোড়পুকুর, দক্ষিণ ছায়াবিথি, হারিনাল, চান্দনা চৌরাস্তা, বোর্ডবাজার, ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী কলেজ গেট, আউচপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভ্রাম্যমাণ মৌসুমি পিঠার দোকান। ছোট ভ্যানের ওপর কয়েকটি চুলায় আগুন জ্বলছে। তাতে তৈরি হচ্ছে চিতই, ভাপা ও তেলের পিঠা। সঙ্গে রয়েছে নানা পদের ভর্তা।
সাধারণত দোকানগুলো চালু হয় বিকেল চারটার কিছু পর। চলে রাত ১০ থেকে ১১টা পর্যন্ত। এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় জমে সন্ধ্যার পর থেকেই। অনেকে পরিবার নিয়ে পিঠা খেতে যান। আবার কেউ কেউ বেশি করে পিঠা নিয়ে যান বাড়ির জন্য, দুধ চিতই পিঠা তৈরির জন্য। শুক্রবার বিকেলে গাজীপুরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সড়কে একটি পিঠার দোকানের সামনে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি একসঙ্গে ১২টি পিঠা কিনছিলেন। তিনি বলেন, ‘মূলত শহরের বাড়িতে পিঠা বানানো ঝামেলা। এ ছাড়া সরঞ্জামও নেই। আর বানালেও দোকানের মতো হয় না। তাই ঝামেলা কমাতে দোকান থেকেই কিনে নিচ্ছি।’
শীতে ভাপা ও চিতই পিঠার কদর সবচেয়ে বেশি। তাই ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা এই দুই পদের পিঠাই বেশি বিক্রি করেন। এ ছাড়া কিছু দোকানে তেলের পিঠাও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
তবে এবার পিঠা বিক্রিতে করোনার ছাপ পড়েছে বলে দাবি একাধিক বিক্রেতার। তাঁদের মতে, অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এবার পিঠা বিক্রির হার অনেক কম। করোনার কারণে রাস্তাঘাটে লোকজন কম। এ ছাড়া অনেকেই করোনার ভয়ে পিঠা কিনতে চান না বলে দাবি তাঁদের।
জোড়পুকুর এলাকায় পিঠা বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, গত বছরও এই দিনে দৈনিক ১২ থেকে ১৪ কেজি চালের পিঠা বিক্রি হতো। কিন্তু এবার টেনেটুনে চার থেকে পাঁচ কেজি চালের পিঠা বিক্রি করা যায়।