বিএনপির প্রার্থী ৬৯৭ ভোট পেয়েছেন। নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫৮৩ ভোট। ভোটের ব্যবধান ১৩ হাজার ৮৮৬।
ভয় পেয়ে পিছু হটার কারণেই কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। বিশাল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তাঁকে পরাজিত করেছেন। যদিও শুরুর তিন ঘণ্টা পর অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এহেসান কুফিয়া ছিলেন বাজিতপুর পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী। এর আগে আরও দুবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একবার জয় পান। তাঁর বাবা আবদুল্লাহ বুরহান কুফিয়া এই পৌরসভার চারবারের চেয়ারম্যান ছিলেন। রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিবারের সন্তান হলেও তাঁর এবারের পরাজয়ের পার্থক্য অনেক বড়। তিনি মাত্র ৬৯৭ ভোট পেয়েছেন। নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫৮৩ ভোট। ভোটের ব্যবধান ১৩ হাজার ৮৮৬।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ের পার্থক্যটা বড় হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখন বাজিতপুরের সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। অনেকে নানাভাবে কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, নির্বাচনের দিন কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে নৌকার একক নিয়ন্ত্রণ এবং বিপরীতে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে না থাকার বিষয়টি ভারসাম্যহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
বিশেষ করে নির্বাচনের দিন পরিবেশ কোনোভাবেই ধানের শীষের অনুকূলে যাবে না, এমনটা অনেক আগে থেকে ধারণায় ছিল বিএনপির। দুপুরের আগে ভোট বর্জন করা ছাড়া উপায় থাকবে না, তা-ও নিশ্চিত ছিল খোদ
প্রার্থী। নির্বাচনের ফলাফল বলতে নির্দিষ্ট সময়ের পর বর্জন, এমন বিশ্বাস বিএনপি শিবিরে আরও বেশি নীরবতা নেমে আসে। যথারীতি ভোট
শুরুর তিন ঘণ্টা পর বেলা ১১টায় এহেসান কুফিয়ার কাছ থেকে ভোট বর্জনের ঘোষণা আসে।
ফলে বাকিটা সময় কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে নৌকার একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ফলাফলে বড় ধরনের পার্থক্য গড়ে দেয়।
মনিরুজ্জামান উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব। শুরু থেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তাঁর অবস্থান ছিল সুদৃঢ়। তিনি বলেন, ‘এক যুগ ধরে আমরা ক্ষমতায় নেই। আমাদের ভাগ্য মামলা আর হামলা দিয়ে রচিত। ফলে কর্মী-সমর্থকদের
আমি কত ভোট পাব, এখন এই সিদ্ধান্ত ভোটারের কাছে নেই। কে কত ভোট পাবে, এই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের। কারণ, নির্বাচন তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন।এহেসান কুফিয়া, বিএনপির প্রার্থী
মনোবল ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচনে নৌকার দাপট আর প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের মাত্রা বেড়ে যায়। ধানের শীষের প্রার্থীর ঠিকানা হয় ঘর। পরিবেশ এতটা নাজুক পর্যায়ে পৌঁছায় যে এই পরিবেশে আর আস্থা রাখা যায়নি। কয়েক দিন আগে থেকেই প্রায় নিশ্চিত ছিলাম, বর্জন ছাড়া আমাদের গতি নেই। ফলে আমাদের কর্মীরা হাল ছেড়ে দেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুষ্ঠু ভোট হয়নি, এ কথা বাজিতপুরের জনসাধারণ শতভাগ বিশ্বাস করেন। ভোটের অস্বচ্ছতা নিয়ে দ্বিমত নেই আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর। তবে তাঁরা এই অবস্থার জন্য বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা আর আগে থেকে পিছু হটার মানসিকতাকে বেশি দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকা দরকার ছিল। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলে পরাজয়ের পার্থক্যটা এত বড় হতো না।
ভোটের ব্যবধান বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী এহেসান কুফিয়া বলেন, ‘আমি কত ভোট পাব, এখন এই সিদ্ধান্ত ভোটারের কাছে নেই। কে কত ভোট পাবে, এই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের। কারণ, নির্বাচন তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন।’
আগেভাগে ভোট বর্জন পরাজয়ের মাত্রা বড় হওয়ার একমাত্র কারণ কি না, এমন প্রশ্নে এহেসান কুফিয়ার উত্তর, ‘মনে রাখতে হবে, প্রশাসনই এখন আওয়ামী লীগ। প্রশাসন আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে না দিলে দাঁড়িয়ে থাকব কীভাবে?’ তাঁর মতে, এবারের ধানের শীষের ভোট এক হাজারের নিচে নেমে আসার পেছনে স্থানীয় সাংসদ আফজাল হোসেনের বিশেষ নেতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাংসদ।